১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:২৭

ভারতের প্রথম নারী ‘সুপারস্টার’

বিনোদন ডেস্ক :

শ্রীদেবী, ভারতের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি কাঁপানো অভিনেত্রী। ১৯৬৩ সালের ১৩ আগস্ট তামিলনারুর শিভাকাশি এলাকায় এ অভিনেত্রীর জন্ম। তার নাম রাখা হয়েছিল শ্রী আম্মা ইয়াঙ্গার। তার মা রাজেস্বরী ছিলেন তামিল এবং পিতা আয়ুপপান ছিলেন তেলেগুর। তার পিতা উকিল ছিলেন। পরিবারে শ্রীদেবীর এক বোন এবং দুই সৎ ভাই ছিল।
শ্রীদেবী ভারতের প্রথম নারী ‘সুপারস্টার’। মাত্র ৪ বছর বয়সে তিনি তামিলা সিনেমা ‘থানাইভান’ এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৭১ সালে ‘বুমবাটা’ সিনেমায় শিশু শ্রীদেবীর অভিনয় ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এই মালায়াম সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য তাকে কেরালার সেরা শিশু শিল্পীর পুরস্কার দেয়া হয়। এরপর শিশুশিল্পী হিসেবে একের পর এক সিনেমায় তিনি অভিনয় করতে থাকেন।
শিশুশিল্পী হিসেবে কেবল দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমাতেই তিনি অভিনয় করেননি। বরঞ্চ হিন্দি সিনেমা ‘জুলি’তেও তিনি শিশুশিল্পী তিনি অভিনয় করেছেন। তিনি তখনও অনেক ছোট ছিলেন, সেসময় বিখ্যাত পরিচালক কে বালা চন্দন শ্রীদেবীর জীবন পুরো বদলে দেন। তিনি শ্রীদেবীকে তামিল সিনেমা ‘মুনড্রু মোরিচু’তে অসাধারণ একটি চরিত্র দেন। কিশোরী শ্রীদেবীর বিপরীতে এ সিনেমায় ছিলেন দুইজন সুপারস্টার- কমল হাসান এবং রজনীকান্ত।
শ্রীদেবী শুধু মালায়াম, তেলেগু, তামিল সিনেমাতেই অভিনয় করেননি। পাশাপাশি কন্নঢ় সিনেমায়ও নিজের অভিনয় প্রতিভার চমক দেখান। নাচের জন্য তিনি যতটা সমাদৃত হয়েছেন ঠিক ততটাই সমাদৃত হয়েছেন অভিনয়ের জন্যও। কমল হাসানের সঙ্গে তার সিনেমা ‘সাদমা’ কে ভুলতে পারে? তামিল ও তেলেগুতে সমাদৃত নায়িকা হিসেবে একের পর এক সিনেমায় অভিনয়ের পর তিনি হিন্দি সিনেমায় চলে আসেন।
১৯৭৮ সালে হিন্দি সিনেমায় নায়িকা হিসেবে শ্রীদেবীর অভিষেক হয় ‘সোলভা সাওয়ান’ এর মাধ্যমে। ১৯৮৩ সালে অভিনেতা জিতেন্দ্রের সঙ্গে শ্রীদেবির ‘হিম্মতওয়ালা’ সিনেমাটি বক্স অফিসে ঝড় তুলে। এরপর ‘মাওয়ালি’ হোক, কিংবা ‘তোফা’, ‘কর্ম’ হোক কিংবা ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘চালবাজ’ হোক কিংবা ‘লামহে’- প্রতিটি সিনেমার সঙ্গে তার অভিনয়ের পরিপক্কতা সামনে আসতে থাকে।
শ্রীদেবী সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। গ্লামারাস নায়িকা হিসেবে তিনি যেমন অভিনয় করেছেন তেমনি আবার মেকআপ ছাড়া চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। এমন একটা সময়ও আসে যখন শ্রীদেবীর সম-মানে অবস্থান করার মতো দ্বিতীয় কোনো অভিনেত্রীও ছিল না। ফলে ট্রেনের গতিতে সামনে দিকে ছুটতে থাকে তার ক্যারিয়ার। বড় বড় তারকারা সেসময় তার সঙ্গে অভিনয় করছিলেন। অনিল কাপুর হোক, কিংবা অমিতাভ বচ্চন, কমল হাসান হোক কিংবা রজনীকান্ত, জিতেন্দ্র হোক কিংবা সানি দেওল, সকলের সঙ্গে শ্রীদেবীর জুটি রেকর্ডের পর রেকর্ড সৃষ্টি করতে থাকে।
এরপর তার জীবনে এমন একটি পরিবর্তন আসে, যা সকল নারীর জীবনে আসে। ১৯৯৬ সালে শ্রীদেবী বিয়ের করে ফেলেন। খ্যাতনামা প্রযোজক বনি কাপুরের সঙ্গে সাত পাঁকে বাধা পড়েন শ্রীদেবী। কিন্তু বনি কাপুর বিবাহিত ছিলেন এবং সংসারে বাচ্চাও ছিল। বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াটা শ্রীদেবীর জন্য কঠিন সময় হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়। বনি কাপুর তার স্ত্রী থেকে আলাদা হোন এবং শ্রীদেবীর সঙ্গে দ্বিতীয় সংসার সাজান। এ সূত্রে শ্রীদেবী অর্জুন কাপুরের সৎ মা। বনি কাপুরের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল শ্রীদেবীর।
বিয়ের পর শ্রীদেবী সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি থেকে দূরে চলে যান। তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক হোন। তার বড় মেয়ে জানভি এবং ছোট মেয়ে খুশি। প্রায় ৬ বছর রূপালী পর্দা থেকে দূরে থাকার পর শ্রীদেবী অভিনয়ে ফেরেন। তবে সিনেমা হলে নয় বরঞ্চ ঘরের টিভি স্ক্রিনে তাকে দেখা যায়। ২০০৪ সালে তার অভিনীত টিভি সিরিয়ালটির নাম ছিল ‘মালিনি আইয়ার’। পরবর্তীতে রিয়েলিটি শোয়েও তাকে বিচারক হিসেবে দেখা যায়। খুব বেশিদিন তিনি সিনেমা থেকে দূরে থাকতে পারেননি। কয়েক বছর প্রতীক্ষার পর ২০১১ সালে ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ সিনেমার মাধ্যমে শ্রীদেবীকে দ্বিতীয়বার দেখা যায়। এতে তিনি প্রমাণ করে দেন যে, কেন তাকে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে জবরদস্ত অভিনেত্রীদের একজন হিসেবে মানা হয়ে থাকে।
শ্রীদেবীর বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার পুরস্কারের তালিকা অনেক লম্বা। শ্রীদেবী হাতেগোনা সেসব অভিনেত্রীদের একজন যিনি ভারতের সাদাকালো সময়ের সিনেমার সময়ে কাজ করেছেন, শিশু শিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছন এবং বিভিন্ন ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং সবক্ষেত্রে নিজস্ব পরিচয় সৃষ্টি করেছেন। ভারতের সিনেমা ইতিহাসে শ্রীদেবীর নাম সবসময়ই গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হবে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮ ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ