দৈনিক দেশজনতা অনলাইন ডেস্ক:
প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা ও সংস্কার করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটি বলছে, মন্ত্রিসভার অনুমোদিত এই আইনটির পরিসর বিশাল ও অপব্যবহারযোগ্য। এজন্য আইনের কঠোর দিকগুলো সংশোধন জরুরি। বৃহস্পতিবার সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটির অনুমোদন দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত আইনটি আগের আইনের চেয়ে আরও ব্যাপক এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশের যে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন। এইচআরডব্লিও’র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করার কোনো ইচ্ছা নেই বলে বাংলাদেশ সরকার যে দাবি করছে, প্রস্তাবিত আইনটি তার বিরুদ্ধে। আইনের কমপক্ষে পাঁচটি ধারায় মতপ্রকাশের বিষয়টি অস্পষ্টভাবে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আইনটি ব্যাপকভাবে সমালোচনা দমনের একটি লাইসেন্স।’ অ্যাডামস বলেন, ‘মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের যে বাধ্যবাধকতা আছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। সংসদের উচিত বিলটি প্রত্যাখ্যান করা ও দেশের নাগরিকরা মুক্তভাবে কথা বলতে পারে, এমন আইনের প্রতি সম্মান জানানো।’
প্রতিবেদনে আইনটির ১৪, ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারার সমালোচনা করা হয়েছে। ১৪ ধারার সমালোচনায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অথবা জাতির পিতার বিরুদ্ধে অপপ্রচার’ এ অপরাধের শাস্তি ১৪ বছর জেল। কিন্তু জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিটি মনে করে ঐতিহাসিক ঘটনার ক্ষেত্রে মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে এই শাস্তি আরোপ করা জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বেমানান।
একইভাবে ২৫ ধারায় উল্লিখিত ‘আগ্রাসী এবং ভয়ানক’ পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে আইনের লঙ্ঘন হবে। কিন্তু কোন কাজগুলো আগ্রাসী ও ভয়ানক তার স্পষ্ট বিবরণ আইনে নেই। প্রস্তাবিত আইনের ২৮ ধারায় ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ করলে ৫ বছরের শাস্তির বিধান করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদন বলছে, এটা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য হয়নি। ৩১ ধারার ‘বিভিন্ন শ্রেণী ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করা’ এ অপরাধের বিষয়টিও সমালোচনার যোগ্য বলে উল্লেখ করছে সংস্থাটি।
প্রসঙ্গত, এর আগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারাসহ ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে ও অনুরূপ বেশকিছু বিধান রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। আইনের বিধানগুলো অপপ্রয়োগের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে বলে ব্যাপক সমালোচিত হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এতে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। ৫৭ ধারায় অপরাধের ধরনগুলো উল্লেখ ছিল একসঙ্গে, নতুন আইনে সেগুলো বিভিন্ন ধারায় ভাগ করে দেয়া হয়েছে মাত্র। অ্যাডামস বলছেন, মূলত ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের অনেকগুলো বিষয় মূলত স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করবে। পার্লামেন্টে বিলটি প্রত্যাখ্যান করা উচিত।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি