১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:১৩

স্বামী ফেলে গেছে, ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় মা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বছর আটেকের ছেলে স্বর্ণাভকে নিয়ে আসানসোল কোর্টচত্বরে গত সাত দিন ধরে রাত কাটাচ্ছেন মিতালি মণ্ডল। পড়াশোনায় বেশ ভাল ছেলেটি। সামনেই ওর পরীক্ষা। কোথাও ঠাঁই না পেয়ে মায়ের সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে গাছ তলাতেই বই খুলে পড়তে বসেছে সে। পথই এখন তাদের ঠিকানা। আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, শ্বশুরবাড়ির ‘অত্যাচার’ সহ্য করতে পারেননি মিতালি মণ্ডল। বাধ্য হয়ে স্বামীর সঙ্গেই শ্রীপল্লির ভাড়াবাড়িতে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু, সেই সুখও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। স্বামী সুভাষ সাহা তাদের ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

ভাড়া দিতে না পেরে ছেলেকে নিয়ে ওই বাড়ি থেকেও বিতাড়িত হয়েছেন মিতালি মণ্ডল। তার বর্তমান ঠিকানা আসানসোল কোর্টচত্বর। মিতালি জানালেন, শহরজুড়ে হেঁটে হেঁটে কাজের সন্ধান করেছি। কিন্তু, কোথাও কারও সাহায্য পাইনি। মুখ তুলে তাকায়নি কেউ। তাই পথই এখন আমাদের ঠিকানা। পড়াশোনায় বেশ ভাল ছেলেটি। সামনেই পরীক্ষা ওর। তাই এখানেই বই খুলে পড়তে বসিয়েছি।

২০০৬ সালে আসানসোলের রাসডাঙা অঞ্চলে বিয়ে হয়েছিল কল্যাণপুরের বাসিন্দা মিতালি মণ্ডলের। তার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন অত্যাচার করত। তবু মুখ বুজে তা সহ্য করে সেখানেই থাকতেন। সন্তান হওয়ার পরে সেই অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

চরম পর্যায়ে এসে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে স্বামীকে নিয়ে ওঠেন ভাড়া বাড়িতে। তখন স্বর্ণাভের বয়স কেবল ২ বছর। মিতালি বলেন, ‘স্বামী বেশি দিন আমাদের সঙ্গে থাকেননি। বাড়িতেই ফিরে যায়।’ কিন্তু, মিতালি আর শ্বশুরবাড়ি ফিরে যাননি। যাননি বাপের বাড়িতেও। সেই থেকে শুরু লড়াই, যা চলছে আজও।

ছেলে মানুষ করতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন তিনি কাজের খোঁজে। প্রথমে মার্কেটিংয়ের চাকরিতে যোগ দেন। পরে সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। মিতালির অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ি না ফিরলেও তার ওপর মানসিক নির্যাতন কমেনি। নানাভাবে তাকে হেনস্থা শুরু হয়। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের কাজে লাগিয়ে তাকে সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

তবে দমে যাননি বা হার মানেননি মিতালি। ভাড়া বাড়িতে থেকে পাঁপড়সহ বিভিন্ন খাবার জিনিস বিক্রি করে দিন কাটাতে শুরু করেন। ছেলে স্বর্ণাভকে ভর্তি করেন আসানসোলের একটি স্কুলে। পড়াশোনাতেও বেশ ভাল স্বর্ণাভ। এভাবেই চলছিল। কিন্তু, সম্প্রতি তাতে ছেদ পড়ে। ভাড়া দিতে দেরি হওয়ায়  ভাড়া বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয় তাকে। শুধু তাই নয়, আটকে রেখে দেয় তার সমস্ত জিনিসপত্র। বাধ্য হয়ে কোর্টের অস্থায়ী ছাউনিতে এখন রাত কাটাচ্ছেন তারা।

প্রতিদিন ভোরে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে কাজের সন্ধানে যান। রাতে ফিরে আসেন ছাউনি তলে। রাস্তাতেই খাবার জোটে অন্যের দয়াতে। এ ব্যাপারে মহকুমাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরী বললেন, ‘ঘটনাটি আমার নজরে এসেছে। ওই মহিলা ও তার ছেলের কী ব্যবস্থা করা যায় সেটা দেখছি।’

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮ ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ