২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:০৬

বিয়ন্ড দ্য ম্যানমেইড ইউনিভার্স

শিল্পসাহিত্য ডেস্ক:

মনে করুন, আপনি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী একজন মানুষ। অ্যাডভেঞ্চারের আশায় অদ্ভুত সব রহস্যে ঘেরা এক দ্বীপে গেলেন, যার জন্মই হয়েছে ‘রাতারাতি’। রহস্যের উৎস খুঁজতে খুঁজতে একটি ওয়ার্মহোল এর ভেতর দিয়ে চলে গেলেন, পৃথিবী থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরের নতুন কোন পৃথিবীতে। আর সেখানে গিয়েই জানতে পারলেন, আমাদের পৃথিবী ধ্বংস হতে সময় আছে মাত্র ২৪ ঘন্টা। তখন কী করবেন আপনি? কীভাবে রক্ষা করবেন প্রিয় পৃথিবীকে?

এমনই এক কঠিন প্রশ্নের দিকে ঠেলে দেয় তরুণ লেখক তাসরুজ্জামান বাবু’র কল্পবৈজ্ঞানিক থ্রিলার ‘বিয়ন্ড দ্য ম্যানমেইড ইউনিভার্স’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় তরুণ, ক্যাম্পাস থেকে ট্যুরে গেছে অদ্ভুত সব রহস্যে ঘেরা একটি দ্বীপে। যার উত্থান হয়েছে রাতারাতি। সেই সময় দ্বীপটি নিয়ে নানা রকম ভয়ঙ্কর এবং আজগুবি কথাবার্তা চলতে থাকে। সেসব তথ্য গবেষণা করতে এসেছিলেন আমেরিকার দুজন প্রবাসী বাঙালি প্রফেসর। কিন্তু দ্বীপে প্রবেশের পরে আর তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ট্যুরে গিয়ে ছয়বন্ধু রহস্যের উৎস খুঁজতে খুঁজতে একটি ওয়ার্মহোল এর ভেতর দিয়ে চলে যায় পৃথিবী থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরের থিয়ান গ্রহে। সেখানে গিয়েই জানতে পারে, আমাদের পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। কী করবে অঙ্কুররা এখন?

এই বইয়ের সবচেয়ে অভিনব ব্যাপারটি হলো গল্পের প্লট । প্রথাগত সায়েন্স ফিকশনের মতো নিছক গল্পের সাথে মিশ্রিত এক চিমটি ‘অপবিজ্ঞান’ নয় । কিছুটা গল্প, কিছুটা বিশুদ্ধ বিজ্ঞান, আর বাকিটা লেখকের অবিশ্বাস্য কল্পনাশক্তি ।

এমন হাইপোথিসিসধর্মী সায়েন্স ফিকশন বাংলা ভাষায় এই প্রথম পড়ার অভিজ্ঞতা হলো। বর্তমানে সায়েন্স ফিকশনের একটা গৎবাঁধা ধারা দাঁড়িয়ে গেছে, সেই ধারার মধ্যে একই ধরনের বিষয়বস্তুর চর্বিতচর্বণে সায়েন্স ফিকশন লেখা হচ্ছে। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর এগুলো হাস্যকর ও ছেলেভুলানো মনে হয়। সেই ভিত্তিতে বিবেচনা করলে লেখকের এই বইটি পড়ে রীতিমতো চমকে উঠতে হয়। এককথায় নবীন-প্রবীণ সকলেরই উপযোগী একটি বই।

বইটির বর্ণনাভঙ্গিতেও অসাধারণত্বের ছাপ। টুকরো টুকরো বাক্য, যেন দাঁড়িপাল্লায় ওজন করা। একই তালে বয়ে গেছে পুরো কাহিনী জুড়ে। সরল-সিধে ভাষার বর্ণনায় একধরনের মুগ্ধতা ঘিরে আছে। যে কোনো বইয়ে পাঠকের প্রথম বিবেচনা থাকে, লেখকের লেখনশৈলী পাঠককে এক পৃষ্ঠা থেকে অন্য পৃষ্ঠায় টেনে নেয় কিনা। এক্ষেত্রে প্রতি পৃষ্ঠাতেই একটি কথাই বারবার মনে হয়েছে, কী হবে এবার?

বাংলা সাহিত্যে সায়েন্স ফিকশন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট তেমন হয় না। লেখক এই গ্রন্থের নাম দিয়েছেন কল্পবৈজ্ঞানিক থ্রিলার। অর্থাৎ সায়েন্স ফিকশনের সাথে থ্রিল মিশিয়ে লেখক নতুন একটা এক্সপেরিমেন্ট চালাতে চেয়েছেন। এক্ষেত্রে তাকে অনেকাংশেই সফল বলা যায়। যদিও সায়েন্স ফিকশন আর থ্রিলের অনুপাতটা সমান ছিল না। তবু একক রচনার মধ্যে কল্পবিজ্ঞান, থ্রিলার, অ্যাডভেঞ্চার, সাসপেন্স, হরর ইত্যাদির সমন্বিত স্বাদ প্রদানের চেষ্টাকে স্বাগত জানাতেই হয়।

সবশেষে লেখক এক চিমটি ‘ম্যাজিক রিয়েলিজম’ মিশিয়ে এটিকে একটি আধুনিক সাহিত্যকর্মের আদল দিতে প্রয়াস পেয়েছেন। কাহিনীর শেষে লেখক যে বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন তাও খুব আবেদনময়ী।

বিজ্ঞানের অতি দুরূহ কিছু বিষয়কে লেখক এত সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করেছেন যা বোঝার জন্য বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার প্রয়োজন নেই।

সার্বিক বিবেচনায় বলব, বাংলাদেশের কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে আরো একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখকের আগমনধ্বনি শোনা যাচ্ছে।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮ ৫:৫৬ অপরাহ্ণ