২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:৫৩

রোহিঙ্গাদের গণহত্যার পরে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা: ওয়াশিংটন পোস্ট

দৈনিক দেশজনতা অনলাইন ডেস্ক: 

মিয়ানমারের উত্তর রাখাইনের উপকূলীয় গ্রাম ইন দিন। বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলিমরা বছরের পর বছর ধরে পাশাপাশি বসসাব করে আসছে। গ্রামবাসীরা বঙ্গোপসাগার থেকে মাছ আহরণ ও মাঠে ধান চাষ করতেন। কিন্তু গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর ইন দিনে যা ঘটেছে, তা মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সবচেয়ে বেদনায়দায়ক ক্রান্তিকাল। পুরো পৃথিবীকে যা ব্যথিত করে তুলেছে।

সেদিন ১০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করে একটি অগভীর কবরে মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে মৎস্যজীবী, দোকানি, দুই কিশোর শিক্ষার্থীরা ছিলেন। মার্কিন সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের অকুতোভয় সাংবাদিকদের বরাতে আমরা এই বর্বর নিষ্ঠুরতার কথা জানতে পেরেছি। তারা এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত করেছেন এবং সংবাদ সংস্থাটি সীমাহীন দায়িত্ব নিয়ে তা প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারিবদ্ধভাবে হাঁটু গেড়ে বসানো পেছনে হাত বাঁধা ১০ রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বৌদ্ধদের কবর খোঁড়ার দৃশ্য দেখছেন। কিছুক্ষণ পরই সেই কবরে তাদের মাটিচাপা দেয়া হয়। অত্যন্ত দুজনকে বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা কচুকাটা করে, বাকিদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এমনকি বৌদ্ধ গ্রামবাসীদের মধ্যে যারা রোহিঙ্গাদের বসতবাড়ি ভস্মীভূত করে দিয়েছিল, যারা মুসলমানদের হত্যা করে তাদের মরদেহ কবর দিয়েছিল, দুই সাংবাদিক তাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। হৃদয়-ভাঙা আলোকচিত্র দিয়ে প্রতিবেদনটির সাক্ষ্যপ্রমাণ আরও জোরালো করেছেন। রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মূল অভিযানের কেবল একটি অধ্যায় হচ্ছে ইন দিনের ওই গণহত্যা।

গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর ৩০টি ফাঁড়িতে কথিত হামলার অভিযোগ তুলে সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে। প্রতিশোধ নিতে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের গ্রামে পর গ্রাম গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তাদের বসতবাড়ি ও ফসলের ক্ষেত পুড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব গ্রামে বাস করা পৌনে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া গ্রামে ঢুকতে দেয়া হয়নি। রয়টার্সের প্রতিবেদনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, মিয়ানমারের কারগারে আটক ও নিষ্ঠুর আচরণের শিকার দুই সাংবাদিক ওয়া লন ও তার সহকর্মী কেইয়াও সো ওও’র নাম প্রতিবেদনটির শীর্ষে রয়েছে।

গোপন নথি সংগ্রহের অভিযোগে ১২ ডিসেম্বর তাদের আটক করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক গোপনীয়তা আইন ও তাদের কাছে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি পাওয়া গেছে বলে জানুয়ারিতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের ওই আইনে ১৪ বছর সাজা দেয়ার বিধান রয়েছে। ইন দিনে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার কথা জানুয়ারিতে স্বীকার করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। কিন্তু তাদের দাবি, নিহতরা ছিলেন সন্ত্রাসী। সত্য ধামাচাপা দিতে মিয়ানমার সরকারের অত্যন্ত নোংরা চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে রয়টার্সের সাংবাদিকরা। যুক্তরাষ্ট্রের সাহিত্য ও বাকস্বাধীনতা বিষয়ক সংগঠন পেন আমেরিকা ওই দুই সাংবাদিককে রাইট এ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মনিত করেছে।

মিয়ানমারের যদি গণতন্ত্রের প্রতি ন্যূনতম সম্মান থেকে থাকে, তবে অভিযোগ খারিজ করে দুই সাংবাদিককে খালাস দেয়া উচিত। এটা গভীর উদ্বেগের বিষয় যে, সাংবাদিকদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ ও হামলার ঘটনা শান্তিতে নোবেলজয়ী দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির নামে ঘটছে। মিয়ানমারের দীর্ঘ গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে তার অবদানের জন্যই তাকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তার ক্ষমতা যে নিয়ন্ত্রিত ও সীমিত, এজন্য প্রায় আমরা তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছি। ক্ষমতার মূল নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনীর হাতেই অব্যাহত থাকছে। কিন্তু ইন দিনের গণহত্যা নিয়ে তার কোন নৈতিক পরিচ্ছন্নতা ছিল না। সত্য কথা হচ্ছে, একটি পূর্ণ আন্তর্জাতিক তদন্ত হলে মিয়ানমার তার গণহত্যার অপরাধ ঢাকতে পারবে না এবং অপরাধীদের জড়িতদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি 

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮ ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ