নিজস্ব প্রতিবেদক:
বর্তমানে আদালতের আদেশকেও গুরুত্ব দিচ্ছে না দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। কর্মীদের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা থাকলেও সেটা তারা মানছে না। কর্মীদের আনুষ্ঠানিকভাবে চাকরিচ্যুত না করলেও অফিসে ঢুকতে দিচ্ছে না তাদের। আইনজীবীরা বলছেন, এটা আদালতের নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অন্য দিকে, এ ব্যাপারে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নির্দেশও মানা হচ্ছে না।
গ্রামীণফোনে কর্মরতরা চাকরি স্থায়ী করাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবিতে ২০০৮ সালের ২২ জুন শ্রম আদালতে মামলা করেন, যা বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। হাইকোর্ট কর্তৃক স্থগিত দু’টি ইউনিয়নের মধ্যে ২০০৮ সালে গ্রামীণফোন লিমিটেড শ্রমিক ইউনিয়ন বি-২১৬৪’র দায়েরকৃত মামলায় শ্রম আদালত উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে চার বছর পর কর্মীদের দাবির পক্ষে রায় দেন। গ্রামীণফোন ঐ রায়ের বিরুদ্ধে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে। আদালত পুনরায় উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ২০১২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কর্মীদের পক্ষেই রায় দেন। উভয় শ্রম আদালতের দু’টি রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করে গ্রামীণফোন ।
সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক কাইয়ুম শেখ জানান, হাইকোর্টে চার বছর ধরে এই রিটটি ঝুলে ছিল। এই চার বছর ধরে শোষণ ও নিপীড়নে অনেকেই পঙ্গু ও মৃত্যুবরণ করেন। এই সময়ে অনেকের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে গ্রামীণফোন তাদের স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে বাধ্য করে। এরপর হাইকোর্টের রায় গ্রামীণফোন লিমিটেড শ্রমিক ইউনিয়ন বি-২১৬৪’র শ্রমিক-কর্মচারীদের ২৬৪ জনের পক্ষে না যাওয়ায় তারা সুপ্রিমকোর্টে আপিল করেন। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। তিনি জানান, মামলাটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পরিচালনা করছেন এবং এ মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গ্রামীণফোন কোনোভাবে তাদের কর্মস্থলে প্রবেশে বাধা কিংবা বদলির আদেশ দিতে পারে না।
গ্রামীণফোনের কর্মীদের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অ্যাডভোকেট সেলিম আহসান খান জানান, চলমান মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এমতাবস্থায় কোনোভাবেই গ্রামীণফোন কর্মীদের কর্মস্থলে প্রবেশে বাধা দিতে পারে না। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আদালতের নিয়ম বহির্ভূত কাজ। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি বিষয়ে আইনের বিধি-বিধান রয়েছেন কিন্তু গ্রামীনফোন কোনো বিধি-বিধানই মানছে না। গ্রামীণফোন কর্মচারী-শ্রমিকদের অপর সংগঠন শ্রমিক-কর্মচারী ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান জানান, তাদের সংগঠনের ২০১১ সালে প্রথম শ্রম আদালতে দায়েরকৃত ৪৭২ জনের পৃথক মামলাগুলো বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। এমতাবস্থায় কোনোভাবে আদালতে নিষ্পত্তিযোগ্য বিষয়ে গ্রামীণফোন এককভাবে কর্মীদের কাজে যোগদানে বাধা দিতে পারে না। এটা সম্পূর্ণভাবে আদালত অবমাননা।
কর্মীদের অভিযোগ, আদালতের প্রতি গ্রামীণফোনের অবজ্ঞার পাশাপাশি শ্রমিকদের এ হয়রানির বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটিরও কোনো প্রকার নির্দেশনা মানছে না। সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৬তম বৈঠকের (চ)এ উল্লেখ করা হয়, গ্রামীণফোনের মালিকপক্ষ ও গ্রামীণফোন শ্রমিক কর্মচারী ঐক্যপরিষদ আলোচনা করে শ্রমিক কর্মচারীদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) ও চাকুরি সংক্রান্ত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে বিদ্যমান সমস্যা এক মাসের মধ্যে সুরাহা করে তাদের জানাবেন।
গ্রামীণফোন লিমিটেড শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক কাইয়ুম শেখ বলেন, স্থায়ী কমিটির এ নির্দেশনার ২০ দিনের মাথায় আকস্মিকভাবে কর্মীদের কাজে যোগদানে বাধা দেয়া হচ্ছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে সভাপতি বেগম মন্নুজান সুফিয়ানসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য মুজিবুল হক, ইসরাফিল আলম, শামীম ওসমান, আনোয়ারুল আবেদীন খান, ছবি বিশ্বাস, শিরিন আখতার, রুহুল আমিন, রেজাউল হক চৌধুরী ও রোকসানা ইয়াসমিন ছুটি উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি