আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
এবার ভারতে মুঘল আমলে নির্মিত আইকনিক স্থাপত্য তাজমহলের প্রাঙ্গণে চলবে হিন্দু দেবতা রামের জীবনগাথা নিয়ে ‘রামলীলা’।
রাজ্যের সরকারের এ ধরণের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পর তা নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি তাজ মহোৎসবের উদ্বোধনী উৎসবে রামবন্দনা বাজবে, আয়োজকদের পরিকল্পনা সেটাই। সরকারের পর্যটন বিভাগ তাজমহলকে ঘিরে প্রতি বছর ‘তাজ মহোৎসব’ আয়োজন করে থাকে। উত্তরপ্রদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার তাজমহলের উদ্বোধন হবে হিন্দুদের ভগবান রামের জীবনগাথা-নির্ভর নৃত্যগীতের মধ্যে দিয়ে।
ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিরোধী দলগুলো এর সমালোচনায় সরব হয়েছেঅ। অনেক ঐতিহাসিকও বলছেন এটা তাজমহলের ঐতিহ্যকে জোর করে অস্বীকার করার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।
প্রতি বছর শীতের শেষ দিকে আগ্রা মেতে ওঠে তাজ মহোৎসবকে ঘিরে- যেটা মূলত ভারতের সবচেয়ে বড় পর্যটক আকর্ষণকে কেন্দ্র করে এক সাংস্কৃতিক উৎসব, আর পাশাপাশি মুঘল সংস্কৃতির উদযাপনও বটে।
কিন্তু সেই রেওয়াজ ভেঙে উত্তরপ্রদেশ সরকার এবার রামলীলা আর রাম-বন্দনাকেই তাজ মহোৎসবের মূল থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আর রাজ্যপাল তথা সাবেক বিজেপি নেতা রাম নায়েক দুজনেই থাকছেন সেই মহোৎসবের উদ্বোধনে।
বিজেপি এমপি সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেছেন, রামলীলার মাধ্যমে তাজমহলকে মোটেই অবমাননা করা হচ্ছে না। তাজমহলের বিশাল প্রাঙ্গণে উৎসব আয়োজন সহজ বলেই ওই জায়গাটাকে বেছে নেয়া হয়েছে।
তবে ঘটনা এটাই, তাজমহল আসলে একটি হিন্দু শিব মন্দির, যার আসল নাম ছিল ‘তেজো মহল’ – এই ধরনের প্রচারনা গত কয়েক মাস ধরে আবার জোরেশারে শুরু হয়েছে।
আর এই প্রচারের এক প্রধান কান্ডারী বিজেপির এমপি বিনয় কাটিয়ার, যিনি তাজ মহোৎসব আয়োজকদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
কাটিয়ারের কথায়, ‘তাজ মহোৎসবকে তেজ মহোৎসবও বলা যায়, একই কথা। আমাদের তেজো মহলকে মুসলিম শাসকরা দখল করে সমাধি বানিয়েছেন, এতে তো কোনও ভুল নেই। এখন একে কীভাবে আবার তেজো মন্দিরে রূপান্তরিত করা হবে, সেটাই আপনারা দেখতে থাকুন।’
রাজ্যের বিরোধী সমাজবাদী পার্টি অবশ্য এক হাত নিচ্ছেন বিনয় কাটিয়ারের মতো নেতাদের।
দলটির মুখপাত্র ঘনশ্যাম তিওয়ারি বলছেন, এসব নেতারা বোধহয় হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি থেকে অপপ্রচার চালানোয় ডক্টরেট করেছেন। অন্য কোনও কাজ নেই, তাই এসব আবোলতাবোল বলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন।
তিনি বলেন,’আমরা পরিষ্কার বলতে চাই তাজমহল একটি বিশ্বস্বীকৃত মনুমেন্ট, ফলে তাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতেও সরকার যেন তা খেয়াল রাখে।’
তবে সন্ন্যাসী-নেতা আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ সরকার এর আগেও যেভাবে রাজ্যের প্রধান দ্রষ্টব্যের তালিকা থেকে তাজকে বাদ দিতে চেয়েছে এবং এখন তাজমহল চত্বরে রামলীলার আসর বসাতে চলেছে – তাতে তাদের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
সূত্র: বিবিসি
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ