নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের যে কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিচার বিভাগ একশো ভাগ ভাল বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি দেশের ৯০ ভাগের চেয়ে বেশি মানুষের আস্থা আছে।
ষোড়শ সংবিধান অবৈধ করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানিতে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আর প্রধান বিচারপতিকে পঙ্গু করে রাখার…..।’ এরপর এই বক্তব্য আর শেষ করেননি প্রধান বিচারপতি।।
প্রধান বিচারপতিসহ সাত বিচারপতির বেঞ্চে বুধবার শুনানি চলাকালে প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের মধ্যে এসব বাক্যালাপ হয়। সকাল ৯ টার দিকে শুনানি শুরু হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন। এখন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন।
আদালতের ভাবমুর্তির বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘কোর্টে যা হচ্ছে তা নিয়ে বিচারপ্রার্থী ও জনগণের একটা গণশুনানি নেন।’
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বর্তমানে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ৯০ ভাগের চেয়ে বেশি। চৌকি আদালত থেকে শুরু করে উচ্চপর্যন্ত। আমি বাঁশখালীর চৌকি আদালতে গিয়েছি। ওখানে যতজন বিচারপ্রার্থী আসে, ডিসি অফিসেও এত আসে না। বাংলাদেশের যে কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিচার বিভাগ ১০০ গুণ ভাল। আপনারাতো প্রধান বিচারপতিকে পঙ্গু করে রাখার……।’
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আই এম নট টোটালি হ্যাপি।’
এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি চেয়েছে যাদের লেখা পড়া আছে, যোগ্যতা আছে, তাদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিতে। কিন্তু দেড় বছরেও নিয়োগ হয়নি। আপনারা যেটা চাচ্ছেন, আপনিও জানেন, সবাই জানে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মার্শাল ল’ তে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করা হয়েছে। এটা সংবিধানের বড় লজ্জা। সেখানে রিলিজিয়াস (রাষ্ট্রধর্ম) বিষয়টাও আছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ওখানে কম্প্রোমাইজ করলে এখানে নয় কেন?’।
শুনানির এক পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সমস্ত পাণ্ডিত্য আমাদের, আপনাদের। কিন্তু বাহাত্তরের সংবিধানে হাত দিতে পারেন না। যোগ করা যেতে পারে।’
আপিল বিভাগ বলেন, ‘জুডিশিয়াল ইমপ্রুভমেন্ট থাকবে না? জুডিশিয়াল রিভিউ থাকবে না? উঠিয়ে দেন। সংবিধানের এ টু জেড আমরা ব্যাখ্যা করবো জনগণের অধিকার প্রশ্নে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে’।
শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি ইংল্যান্ডেরর জুডিশিয়ারি নিয়ে একটি লেখা অ্যাটর্নি জেনারেলকে পড়তে দেন। পড়া শেষে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি যে লিখিত যুক্তি দিয়েছেন, এ লেখা অনুসারে সেটি না জেনেই ইংল্যান্ডের ব্যাপারে দিয়েছেন। পৃথিবীতে একমাত্র সভ্য দেশ ইংল্যান্ড। অলিখিত সংবিধান পালনে চুল পরিমাণ এদিক সেদিক হয়নি। বেক্সিটে হেরে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কি চেতনা, কি মানসিকতা।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। ইংল্যান্ড বিদেশিদের লুণ্ঠন করেছে। তাদের সভ্য বলতে পারেন না।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘লুণ্ঠন অন্য জিনিস। আমেরিকাও লুণ্ঠন করছে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তাদের (ইংল্যান্ড) আইনের শাসন ডেভেলপ করেছে- এটা বলতে পারেন।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ইয়েস, তারা তাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে পেরেছে।’
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘অন্যদের লুণ্ঠন করে নিজের নাগরিকদের সুরক্ষা দিয়েছে।’
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শুনানী চলছিল।
দৈনিক দেশজনতা/এমএইচ