নিজস্ব প্রতিবেদক:
পুলিশের বিরুদ্ধে সাভারের আশুলিয়ায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা তোলার জন্য রীতিমতো লোক নিয়োগ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হলেও কিছু বলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
সাভারের আশুলিয়ায় টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কটি রাজধানীর প্রবেশপথ হওয়ায় এর আশপাশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বড় থেকে শুরু করে ছোট ছোট অসংখ্য দোকানপাট রয়েছে এই সড়কটিতে। আর এসব দোকান পরিচালনা করে সংসার চালায় কয়েক হাজার মানুষ। তবে পরিশ্রমের আয় পুরোটা ঘরে নিতে পারে না ব্যবসায়ীরা। কারণ, আয়ের একটা অংশ দিতে হয়পুলিশকে।
বাবুল নামে এক ব্যক্তি থানা পুলিশের হয়ে মাসিক চাঁদা উত্তোলন করে বলে তাকে দোকানিরা ‘মান্থলি বাবুল’ বলেই চেনেন। তবে ঝক্কি ঝামেলার ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ তারা। টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক সংলগ্ন ও আশপাশের প্রায় একশ ছোট বড় ব্যাটারি ও ভাঙ্গারির দোকান থেকে প্রতি মাসে প্রায় আট লাখ টাকা মাসোহারা তোলার তথ্য মেলে অনুসন্ধানে।
সড়কের বাইপাইল, বগাবাড়ি, ইউনিকসহ বিভিন্ন এলাকায় থানা পুলিশকে মাসোহারা দিয়েই চালাতে হয় এসব দোকান। এই দোকানিদের আর্থিক অবস্থা যে খুব ভালো তা নয়, এই চাঁদা নিতে না হলে তারা আরেকটু ভালো থাকতে পারতেন।
বগাবাড়ি বাজার এলাকার একটি দোকানে গিয়ে মালিকের ভাগ্নের সঙ্গে কথা হয়। ব্যবসা শুরু করব, কী করতে হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঝামেলা তো আছেই কম বেশি। দোকানের সাইজ অনুযায়ী আমগো ডাইরেক্ট থানায় ট্যাকা দিতে অয়। থানায় আমগো মান্থলি (মাসিক) করা। মাসে ১৫ হাজার ট্যাকা দেওন লাগে। মার্কেটের যতগুলা দোকানদার আছে সবাই দেয়।’ ‘পাশের দোকানদারও দেয় আমগো মতই। আর বাবুল আমগো কাছ থাইকা ট্যাকা উঠায় থানায় দিয়া আহে। তয় লোকাল পোলাপাইনগো কোন ট্যাকা দেই না।’
রাস্তার অপর পাশের ছোট একটি দোকানের মালিক বলেন, ‘আমার দোহান থাইকা প্রতি মাসে পাঁচশ ট্যাকা পুলিশরে দেই। তয় ট্যাকা বাবুল তুইল্লা নিয়া যায়। পরে হেই আশুলিয়া থানায় জমা দেয় হুনছি। আমার দোকানের পিছে আমার মত ছোট প্রায় ৪০-৫০টা দোহান আছে। হ্যারাও পাঁচশ কইরাই দেয়। এরহম ছোট বড় মিইল্লা এই এলাকায় প্রায় একশ ভাঙ্গারি দোহান আছে।’ আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘পুলিশরা তো ট্যাকা পয়সা নেয়। হ্যাগো না দিলে ব্যবসা করুম ক্যামনে? এহানকার কিছু দোকানদার মিলা ৫০-৬০ হাজার টাকা দেওন লাগে।’
এছাড়া বগাবাড়ি বাজার এলাকার বেশ কিছু ব্যাটারির পানি বিক্রি ও মেরামত করে এমন কয়েক জন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোকানি জানান, তাদের প্রতি মাসে তিনশ করে টাকা থানায় দিতে হয়। তমিজ নামে এক ব্যক্তি সেই টাকা নিয়ে যায়। না দিলে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। তবে মাসোহারা তোলেন যে ‘মান্থলি বাবুল’, দুই দিন ঘুরেও তার দেখা মেলেনি। মুঠোফোনে অসংখ্যবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেনি।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আউয়ালের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাবুল নামে কাউকে চেনেন না বলে দাবি করেন। তবে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান এ ব্যাপারে জানান, ‘এ ধরনের কোন কর্মকাণ্ড সংঘটিত হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ