২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:৫৭

বেতন অনিশ্চিত দেড় লাখ মাদ্রাসা শিক্ষকের

নিজস্ব প্রতিবেদন

সারাদেশে এমপিওভুক্ত সাড়ে সাত হাজার মাদ্রাসার দেড় লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর এপ্রিল মাসের বেতন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-বিল তৈরি করার দায়িত্ব মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি)। তবে এপ্রিল মাসের বেতন-বিল তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে গত ২৭ এপ্রিল আকস্মিকভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিল তৈরির দায়িত্ব নবগঠিত মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরকে দিয়েছে। পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় তারা গত চার দিনে এ বিষয়ে কিছুই করতে পারেনি। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মাদ্রাসার বেতন।

মাউশি সূত্র জানায়, গত ৩০ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভেঙে নতুন দুটি বিভাগ গঠন করা হয়। এর মাধ্যমে ‘মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগ’ ও ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ’ যাত্রা শুরু করে। পৃথক মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগ গঠন করা হলেও সারাদেশে এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার দায়িত্ব এতদিন মাউশিরই ছিল। এখন এ দায়িত্ব মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরকে দেওয়া হলো। মাদ্রাসা শিক্ষকরা জানান, পর্যাপ্ত ও দক্ষ জনবল নিয়োগ না দিয়েই অনেকটা আকস্মিকভাবে এ দায়িত্ব মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরকে দেওয়ায় তাদের বেতন-ভাতা প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে গেল। চলতি মাসে রমজান শুরু হওয়ার কথা। সঠিক সময়ে বেতন-ভাতা না পেলে শিক্ষক-কর্মচারীরা চরম বিপাকে পড়বেন। এদিকে, সঠিক সময়ে মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব হবে কি-না তা নিয়ে মাউশি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই সন্দিহান। তবে এ নিয়ে তারা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না। মাউশির একটি সূত্র জানায়, আগামী জুলাই থেকে এ দায়িত্ব্ব মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরকে দেওয়ার কথা ছিল। এর আগেই অনেকটা তড়িঘড়ি করে এ দায়িত্ব তাদের দেওয়া হলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় ভাগের পর নবগঠিত বিভাগ দুটির কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব চলছে। এ কারণে শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার ক্ষমতা মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর তড়িঘড়ি করে বুঝে নেয়। প্রতিষ্ঠানটির এই কাজের সক্ষমতা এখনও নেই। এ বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. শেখ মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান মঙ্গলবার সমকালকে বলেন, ‘তারা (মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর) দাবি করছেন, তারা এ কাজ করতে পারবেন। তাদের সক্ষমতা মন্ত্রণালয় নিশ্চয়ই বিবেচনায় নিয়েছে। এরই মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দিতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুকূলে পৃথক কোড ও বাজেট তৈরি করা হয়েছে। দেখা যাক, কী হয়।’ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেন এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি।

মাউশি জানায়, সারাদেশে বিভিন্ন স্তরের এমপিওভুক্ত মোট মাদ্রাসা সাত হাজার ৬১৮টি। এগুলোর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা এক লাখ ৪৮ হাজার ২৪৫। প্রতি মাসে তাদের বেতন-ভাতা বাবদ সরকারের ব্যয় হয় ২৫০ কোটি ৯২ লাখ ২২ হাজার টাকা। এমপিওভুক্তির বাইরেও সরকার স্বীকৃত অনেক মাদ্রাসা রয়েছে। জানা গেছে, বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মাদ্রাসা (সরকার স্বীকৃত) আছে ১৬ হাজার ২২৬টি। এর মধ্যে পূর্ণ এমপিওভুক্ত দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা আছে সাত হাজার ৬১০টি। এমপিওভুক্ত শিক্ষক আছেন এক লাখ ২০ হাজার। কর্মচারী আছেন প্রায় ৪০ হাজার। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য প্রতি মাসে সরকারের ব্যয় হচ্ছে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা। এ ছাড়া ইবতেদায়ি (প্রাথমিক) মাদ্রাসা আংশিক এমপিওভুক্ত। এমপিওভুক্ত সব মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী প্রায় অর্ধকোটি। এ ছাড়া নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীও আছেন। প্রতি এক মাস পর পর এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শূন্যপদে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করা হয়। এতে প্রতিবার দুই থেকে তিন হাজার শিক্ষক-কর্মচারী নতুন এমপিওভুক্তি পান। এর মধ্যে মাদ্রাসায় প্রতি মাসে ৭০০ থেকে ৮০০ জন এমপিওভুক্তি পান। সংখ্যার হিসাবে মাদ্রাসা শিক্ষকরাই বেশি আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। কারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ, প্রাপ্যতা, শূন্যপদ, মাদ্রাসায় আদৌ প্রয়োজনীয় ছাত্রছাত্রী আছে কি-না, সেসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয় না। তবে সাধারণ শিক্ষাধারার স্কুল ও কলেজের ক্ষেত্রে এসব বিবেচনায় নেওয়া হয়।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, দেশে তিন ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এর মধ্যে আলিয়া মাদ্রাসা সরাসরি সরকার নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত। দ্বিতীয় হলো এমপিওভুক্ত বা আংশিক এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা। তৃতীয় ধারাটি হলো কওমি মাদ্রাসা, যা সরকার অনুমোদিত নয়। ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারের নামে এক শ্রেণির ব্যক্তি নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী যখন যেখানে খুশি কওমি মাদ্রাসা চালু করছেন। এপ্রিলে তৈরি করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মোট সরকারি-বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে ৩১ হাজার ৪৪৮টি। এর মধ্যে ২০০৯ সালের এপ্রিলে এমপিওভুক্ত দশ হাজার ১২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকাজ হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে সাত হাজার ৫৬৯টি প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকি দুই হাজার ৪১৫টি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকাজ চলমান।

প্রকাশ :মে ৩, ২০১৭ ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ