দেশজনতা ডেস্ক:
মৃত্যুর কোনো নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট স্থান নেই। যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে মৃত্যু হতে পারে।
প্রতিবছর প্রায় ৩৬০ কোটি যাত্রী আকাশ পথে ভ্রমণ করে। এতো যাত্রীর মধ্যে আকাশপথেও কয়েকজন মৃত্যুবরণ করতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন আকাশ পথে কেউ মারা যায় তখন আসলে কী ঘটে? বিমান যখন ত্রিশ হাজার ফুট ওপরে থাকে, তখন কেবিন ক্রু সহ অন্যরা কিভাবে এই সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয় এবং সমাধান করে?
কিছু বিমানে মৃতদেহের জন্য আলাদা জায়গা বরাদ্দ থাকে এবং অবতরণের আগ পর্যন্ত মৃতদেহ সেখানেই রাখা হয়। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে মৃতদেহের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে।
অর্থাৎ মৃতদেহকে অন্য যাত্রীদের থেকে আড়ালে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, বিমানের কর্মীদের এভাবেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয় যেন তারা এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে সূক্ষ্ম কৌশলের সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারে।
আইরিশ এয়ারলাইন্স ‘রায়ান এয়ার’ এর একজন মুখপাত্র সান অনলাইনকে বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের এভিয়েশন সেফটি রুলস অনুযায়ী সকল রায়ান এয়ার বিমানগুলোতে ডেফিব্রিলেটরস (হৃদ যন্ত্রের গোলযোগ শণাক্তকারী) সহ প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জামাদি থাকে এবং সকল ক্রু প্রাথমিক চিকিৎসা সহ এই ব্যাপারগুলোতে প্রশিক্ষিত। কিছু গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে সরাসরি মেডিকেলের সহায়তা প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের ক্রুরা সবচেয়ে নিকটবর্তী বিমানবন্দরকে মেডিকেল সহায়তার জন্য অনুরোধ করে।’
প্রায়ই মৃতদেহকে খালি সিটগুলোতে অথবা দরজার আড়ালে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। বেশির ভাগ সময়ই কোনো না কোনো কিছু দিয়ে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়, তবে বিমান ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থা থাকে।
আসল ব্যাপার হল, মৃতদেহকে যাত্রীদের থেকে যত আড়ালে রাখা সম্ভব ততই ভালো। বিজনেস ক্লাসের বেশির ভাগ আসন খালি থাকে, মৃতদেহকে সেখানেও রাখা যেতে পারে। এনিটি লং নামের একজন কেবিন ক্রু বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, লোকচক্ষুর আড়াল করার জন্য আমি হয়তো মৃতদেহকে একটা কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখব। যে মারা গিয়েছে তার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করাটা জরুরি। মৃত ব্যক্তির দিকে বারবার তাকানোর ফলে যাত্রীদের দুঃখবোধ যেন না বাড়ে সেজন্যেই এই আড়াল করে রাখার ব্যবস্থা তৈরি করা হয়।
সুই জ্যাকমান নামের একজন নিয়মিত বিমান যাত্রী বলেন, এয়ার নিউজিল্যান্ডের একটা বিমানে করে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে অকল্যান্ড যাওয়ার পথে তার স্বামী মারা গিয়েছিল। তিনি আরো বলেন, আমরা তখন বিজনেস ক্লাসে যাত্রা করছিলাম এবং সে ঘুমের মধ্যেই মারা গিয়েছিল, আর জেগে উঠেনি। যখন বুঝলাম, সে আর জেগে উঠবে না তখন আমি একজন ক্রুকে ডেকেছিলাম যে যাত্রীদের মধ্য থেকে একজন ডাক্তারকে ডেকে এনেছিল। সে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেন এবং বিমান অবতরণের প্রায় চার ঘণ্টা পূর্বে তাকে মৃত ঘোষণা করলেন। আমার মৃত স্বামীকে তার আসনেই একটি কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল এবং পুরো সময়টা তাকে জড়িয়ে রেখেছিলাম। কিছুটা আশ্চর্যের ব্যাপার হল, তার মৃত্যু সনদপত্রে মৃত্যু স্থান হিসেবে লেখা হয়েছিল যে, ফ্লাইট এনজেড৫ লস অ্যাঞ্জেলেস এবং অকল্যান্ডের মধ্য পথে।
ডেভ স্যামওয়েল নামের একজন পাইলট বলেন, আমার শত শত ফ্লাইটে এই ধরনের ঘটনা একবারই ঘটেছিল। আনা আনসারী নামের অন্য একজন যাত্রী বলেন, ১১ ঘন্টার একটি ফ্লাইটে ফ্রাঙ্কফ্রুট থেকে সিঙ্গাপুর যাচ্ছিলাম, দুই সারি পিছনে একজন মহিলা যাত্রার প্রায় শেষ মুহূর্তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ