নিজস্ব প্রতিবেদক:
হজ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ১৮ হজ এজেন্সির মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো পৃথক চিঠিতে হজ এজেন্সির মালিকদের আগামি ৫ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। দুদকের জনসংযোগ দপ্তর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দুদকের পাঠানো চিঠিতে যে ১৮ হজ এজেন্সির মালিকদের তলব করা হয়েছে সেগুলো হলো মেসার্স আল সাফা এয়ার ট্র্যাভেলস, আশা এভিয়েশন, গোল্ডেন বাংলা ট্র্যাভেলস এন্ড ট্যুরস, ইউনাইটেড ট্যুরস এন্ড ট্র্যাভেলস, গোল্ডেন ট্র্যাভেলস এন্ড কার্গো সার্ভিস, বুশরা ট্র্যাভেলস এন্ড ট্যুরস, আল-বালাদ ওভারসিজ, গুলশান এ মোহাম্মাদী ট্র্যাভেলস, মাশফালাহ ট্র্যাভেলস, মিডগুয়ে এভিয়েশন, মদিনা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশন, এন. ই. এয়ার সার্ভিস, সাদ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ইকো এভিয়েশন এন্ড ট্যুরস, ইউরো এশিয়া ট্র্যাভেলস এন্ড ট্যুরস, সিদ্দীকীয়া ট্যুরস এন্ড ট্র্যাভেলস, সাওবান এয়ার ট্র্যাভেলস এবং ওলামা আউলিয়া হজ গ্রুপ বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘দুদক হজ এজেন্সির মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি ভুক্তভোগী ৯৮ জন হজ যাত্রীর বক্তব্যও গ্রহণ করবে। এখন ওই ভুক্তভোগীদের নাম ও স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানা সংগ্রহের কাজ চলছে। খুব শিগগিরই ওই তালিকা ধরে মাঠ পর্যায়ে সফরে নামবে দুদক টিম। একই সঙ্গে বর্তমানে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করে তা যাচাই-বাছাই চলছে।’
১৮ হজ এজেন্সির প্রতারণায় ২০১৭ সালে হজে যেতে পারেনি ৯৮ জন হজ যাত্রী। এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অভিযোগে বলা হয়েছিল, ২০১৭ সালে মেসার্স আল সাফা এয়ার ট্র্যাভেলসের ১৬ জন, আশা এভিয়েশনের ৬ জন, গোল্ডেন বেঙ্গল ট্র্যাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ২ জন, ইউনাইটেড ট্যুরস অ্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেডের ৫ জন, গোল্ডেন ট্র্যাভেলস অ্যান্ড কার্গো সার্ভিসের ৮ জন, বুশরা ট্র্যাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ৩ জন, আল-বালাদ ওভারসিসের ১ জন, গুলশান এ মুহাম্মদীয়া ট্র্যাভেলসের ৭ জন, মেসফাল্লাহ ট্র্যাভেলসের ১ জন, মিডওয়ে এভিয়েশনের ১ জন, মদিনা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশনের ৩ জন, এন-ই এয়ার সার্ভিসের ৩ জন, সাদ এয়ার ইন্টারন্যাশনালের ৩ জন, ইকো এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের ২০ জন, ইউরো এশিয়া ট্র্যাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজমের ২ জন, সিদ্দিকীয়া ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলসের ৬ জন, সাওবান এয়ার ট্র্যাভেলসের ৫ জন এবং ওলামা আউলিয়া হজ গ্রুপ বাংলাদেশের ৬ জন হজে যেতে পারেননি।
দুদকের অনুসন্ধানে হজ ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবৈধ সম্পদের বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ অনুসন্ধানে গত ২৭ ডিসেম্বর অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল যায় রাজধানীর পল্টন এলাকায়। দুদকের অভিযানে হজ এজেন্সির কার্যালয়ের সন্ধান মিললেও পাওয়া যায়নি কর্মকর্তাদের। অভিযানের খবর পেয়ে অনেক এজেন্সির কার্যালয়ে ঝোলানো হয়েছে তালা। অনেকে নথিপত্র সরবরাহের জন্য সময় চেয়েছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অনুসন্ধানের স্বার্থে দুদকের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
দুদক আরো জানায়, কমিশন মূলত ১৮টি হজ এজেন্সির অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধানের সিন্ধান্ত নেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে দুদকের এক উপ-পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হলেও পরে কর্মকর্তা পরিবর্তন করে সহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমানকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয় দুদক। অনুসন্ধান চলাকালে দুদকের পুরাতন অভিযোগের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরো কিছু নতুন অভিযোগ। এর মধ্যে ২০১৬ সালের বছর শেষে হজে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিষয়ে মোট ২২৮টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ে মন্ত্রণালয়ে। আর ওই অভিযোগও দুদকে পাঠানো হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
হাজিদের মানসম্মত ট্রলিব্যাগ না দেওয়া, ভিসা থাকার পরও হজে পাঠাতে টালবাহানা, সৌদি আরবে তাসরিয়াবিহীন (চুক্তিহীন) বাড়িতে রাখা ও নিম্নমানের খাবার দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নভেম্বরে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। কমিটির তদন্তেও হজ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম ও প্রতারণার তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির কাজ বর্তমানে চলছে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি