নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে আয় বাড়লেও বিনিয়োগ কমাচ্ছে শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। ধাপে ধাপে বিনিয়োগ একেবারেই কমিয়ে এনেছে অপারেটরটি। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তারা রাজস্ব আয় করেছে ১২ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। অথচ এই অর্থবছরে তারা বিনিয়োগ করেছে মাত্র এক হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। এভাবে আগের বছরগুলোতেও আয় বেড়েছে কিন্তু বিনিয়োগ পর্যায়ক্রমে কমিয়ে এনেছে অপারেটরটি। একইভাবে সামনের ফোরজিতেও বিদেশ থেকে কোনো বিনিয়োগ আনছে না গ্রামীণফোন। বিটিআরসিতে গ্রামীণফোন লিখিতভাবে জানিয়েছে, তারা এখানকার আয় ও স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েই ফোরজি করবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে গ্রামীণফোনের রাজস্ব আয় ছিল ১০ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। আর ওই অর্থবছরে তাদের বিনিয়োগ ছিল ২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। এর আগের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ছিল ১০ হাজার ৩০১ কোটি টাকা, ওই অর্থবছরে বিনিয়োগ ছিল ১ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। তার আগের ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ছিল ১০ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে বিনিয়োগ ছিল ৩ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। এই হিসেবে দেখা যাচ্ছে, প্রতি অর্থবছরেই বিনিয়োগ কমাচ্ছে অপারেটরটি। অথচ বর্তমানে নেটওয়ার্কের যে অবস্থা তাতে একটানা ৫ মিনিট গ্রামীণফোনে কথা বলাই মুশকিল। ইন্টারনেটের অবস্থা আরো খারাপ। ঢাকা শহরেই সব স্থানে থ্রিজি পাওয়া যায় না। কোথাও কোথায় ইন্টারনেট একেবারেই পাওয়া যায় না। কল ড্রপে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা থাকলেও তারা কোনো ক্ষতিপূরণ দেয় না। গ্রামীণফোনের টাওয়ারগুলোর অবস্থাও করুণ। রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকভাবে করা হচ্ছে না। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এসব খাতে গ্রামীণফোনের বিনিয়োগ একেবারে শূন্যের কোটায়।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমবার যে ফোরজি নীতিমালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছিলেন সেখানে স্পষ্ট বলা ছিল, ফোরজির বিনিয়োগের জন্য বিদেশি কোম্পানিদের শেয়ার অনুপাতে পুরোটাই বিদেশি মুদ্রা বিনিয়োগ করতে হবে। পরে গ্রামীণফোনের নেতৃত্বে অপারেটরদের দাবির মুখে এ ধারা তুলে নেওয়া হয়। আবেদনে বিভিন্ন তথ্যের বিষয়ে বিটিআরসি জানিয়েছে, ফোরজিতে গ্রামীণফোন চলতি আয় এবং ব্যাংক ঋণ থেকে বিনিয়োগ করবে। ফলে তারা যে বিদেশ থেকে কোনো অর্থ আনছে না সেটা এখন পরিষ্কার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদেশ থেকে কোনো ডলার না আসায় সরকারের ফোরজিকে কেন্দ্র করে বড় বিদেশি বিনিয়োগের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছে লাইসেন্স ও স্পেকট্রাম নিলামের আবেদনে নিজেদের এমন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে গ্রামীণফোনসহ মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামীণফোন আবেদনে অনেক তথ্যই দায়সারাভাবে উপস্থাপন করেছে। এখন পর্যন্ত মোট বিনিয়োগ, নেটওয়ার্ক বিস্তার ও সেবা সংক্রান্ত পরিকল্পনা, মূল কোম্পানির অনুমোদনপত্র, স্থানীয় ও বিদেশি কর্মীদের সংখ্যাসহ বেশকিছু বিষয়ে কাগজপত্রসহ সুস্পষ্ট কোনো ধরনের তথ্যই তারা দেয়নি।
বিটিআরসির একজন কর্মকর্তা জানান, আবেদনের বিষয়টিকে গ্রামীণফোন খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। দায়সারাভাবে আনুষ্ঠানিকতা সেরেছে মাত্র। ওই কর্মকর্তার মতে, নতুন করে কোনো অপারেটর ফোরজি সেবা দিতে আগ্রহী হয়নি। দেশি বা বিদেশি কোনো উদ্যোক্তা এগিয়ে আসেনি। এ কারণে বর্তমান সেবা দাতা সবচেয়ে বেশি গ্রাহকের মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন বুঝতে পেরেছে, তাদেরই যোগ্য ঘোষণা ছাড়া বিটিআরসির সামনে আর কোনো পথ নেই। এ কারণে আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটি বেশকিছু অসঙ্গতির মধ্যেও শেষ পর্যন্ত গ্রামীণফোনসহ সব আবেদনকে বৈধ বলে রায় দিয়েছেন। এ ছাড়া বিটিআরসির সামনে কোনো পথও ছিল না। যাচাই-বাছাইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রামীণফোনকে মূল কোম্পানি থেকে বিনিয়োগের সম্মতিসূচক একটি পত্র আনতে বলা হয়েছিল। তারা তা দেয়নি বরং তারা স্থানীয় বোর্ডের চিঠি জমা দিয়েছে। তারা শুরু থেকে এ পর্যন্ত কতো টাকা বিনিয়োগ করেছে তার প্রমাণসহ তথ্য চাওয়া হলেও কোনো প্রমাণপত্র দেয়নি। সরকার অল্প সময়ের মধ্যে ফোরজি সেবা চালু করার জন্য বদ্ধপরিকর। আর সেটাকেই নিজেদের সুযোগ হিসেবে নিয়েছে বড় অপারেটর গ্রামীণফোন। তারা জানে তাদের বাদ দিয়ে ফোরজি সম্ভব নয়। তাই তাদের ইচ্ছেমতো দাবি আদায় করে নিতে পারছে। আর এমন গুরুত্বহীন আবেদনও সে কারণেই। আগামী মার্চের মধ্যে গ্রাহকদের কাছে ফোরজি’র সেবা পৌঁছানোর ব্যাপারে আশাবাদী বিটিআরসি। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদও বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব গ্রাহকের কাছে ফোরজি সেবা পৌঁছতে বিটিআরসি বদ্ধপরিকর।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি