দৈনিক দেশজনতা অনলাইন ডেস্ক:
নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে আটক ব্যক্তিরা কোথায় আছেন তা নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া উচিত বাংলাদেশ সরকারের। একই সঙ্গে আটক ব্যক্তিদেরও মুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে জরুরি পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা এক চিঠিতে এ আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ‘বাংলাদেশ: ইনভেস্টিগেট ফেট অব ডিজঅ্যাপেয়ার্ড’ শীর্ষক বিবৃতিতে সংগঠনটি এ তথ্য দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিণতির বিষয়ে তদন্ত করুন। নিউ ইয়র্ক থেকে ২৭ শে জানুয়ারি প্রকাশ করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুম ও চাপ প্রয়োগের বিষয়টি উদ্বেগের মূল কারণ হয়ে উঠেছে।
বিশেষ করে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন গুমের ঘটনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০১৭ সালেই শুধু কমপক্ষে ৮০ জনকে গোপনে আটকে রাখা ও জোরপূর্বক গুম করে দেয়ার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সাত জনকে পরে তথাকথিত গানফাইট অথবা ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। বিচারবহির্ভুত হত্যাকা-কে এই গানফাইট অথবা ক্রসফায়ার বলে আখ্যািয়িত করা হয়। নিখোঁজ ওইসব ব্যক্তির মধ্যে কমপক্ষে ১৭ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, বাংলাদেশে ভয়াবহ এক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে গোপনে আটকে রাখা ও গুম। বাংলাদেশীরা মনে করেন যেকোনো রকম সমালোচনা ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে প্রশাসনের লোকদের নজরে পড়তে পারেন তারা। ব্রাড এডামস আরো বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ক্ষমতার তৃতীয় মেয়াদের শেষ প্রান্তের কাছাকাছি। তাই যেসব পরিবার তাদের প্রিয়জন নিখোঁজের বিষয়ে উত্তর খুঁজছে তাদেরকে সহায়তা করার জন্য তার উচিত ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করা এবং নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা করা, যাতে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করা এই সমস্যার সমাধান করা যায়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার বিবৃতিতে লিখেছে, যেসব মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন তার কিছু কিছু দৃশ্যত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিরোধী দলীয় বেশ কিছু সদস্য ও তাদের আত্মীয়-স্বজন এখনও নিখোঁজ। এতে বলা হয়, এর আগে সরকার অনেকবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে জাতিসংঘের ‘ইউনাইটেড নেশনস ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউ’তে এ ইস্যুটি তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও নতুন নতুন নিখোঁজ বা গুমের ঘটনা অব্যাহত আছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার বিবৃতিতে বলেছে, হুম নিয়ে তদন্তের সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করে বলেছেন, এসবের সঙ্গে জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। অনেক ক্ষেত্রে, যেখানে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা ওইসব ব্যক্তিকে আটক করেছেন তারা বলেছেন, তারা প্রশাসনের লোক। এর বাইরে পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদেরকে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা শাখা, র্যাব ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য বলে। তাই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সেস’ অনুমোদন করা। ব্রাড এডামস বলেন, নিখোঁজ বা গুমের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি করার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের উচিত জাতিসংঘের বিশেষ ম্যানেড পাওয়াদের আমন্ত্রণ জানানো, যাতে তারা তাদের নিজেদের মতো করে তদন্ত করতে পারে। বন্দিশিবিরগুলোতে অবাধ ও বাধাহীন প্রবেশাধিকার দিতে হবে এসব টিমকে। সব ভিকটিম ও তাদের পরিবারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ করতে দিতে হবে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি