এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা :
ভোলার চরফ্যাসনে পর্যটন দ্বীপ কুকরী-মুকরী ইকো-পার্কের ভিত্তিপ্রস্তরের মাধ্যমে উদ্বোধন করলেন মাহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এসময় ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ইকো-পার্কের উদ্বোধন সাগর পাড়ের পর্যটন ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ভোলা জেলা সদর থেকে ১শ’ ৭০ কিলোমিটার এবং চরফ্যাশন উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১শ’ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপ সগারের কোল ঘেঁষে সাগর কন্যা কুকরী-মুকরী পর্যটন দ্বীপের অবস্থান। প্রায় ২০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ম্যানগ্রোভ বাগানসহ ৪০বর্গ কিলোমিটার আয়তনে রকুকরী-মুকরী একটি ইউনিয়ন। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা ম্যানগ্রোভ বাগান, সাগরের ঢেউ আছঁড়ে পড়া বিস্তৃত সৈকত, হরিণ- বানরসহ নানান প্রজাতির বন্য প্রাণীর কিচির-মিচির, শিয়ালের হাঁক, শীতের অতিথি পাখির কলকাকলী পর্যটকদের আকর্ষণ করছে এই দ্বীপ।
জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সনের ১৩ ডিসেম্বর কুকরী-মুকরী সফর করেন এবং কুকরী-মুকরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে দ্বীপটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। জাতির জনকের স্বপ্নের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সেই সুদূর প্রসারী চিন্তার ধারাবাহিকতায় যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে কুকরী-মুকরী ইকো-পার্ক। বৃহষ্পতিবার রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ইকো-পার্কের উদ্বোধন করবেন।
কুকরী-মুকরী ইকো-পার্কের পরিকল্পনা সম্পর্কে পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লা আল ইসলাম জ্যাকব জানান, কুকরী-মুকরী ইকো-পার্কে বঙ্গবন্ধুর ম্যুড়াল, হরিণ প্রজনন কেন্দ্র, ১শ’ ফুট উচ্চতার ওয়াচ টাওয়ার, শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরনের রাইড, ম্যানগ্রোভ বাগানের অভ্যন্তরে ওয়াক ওয়ে, বাগানের খাল আর সাগর কূলে নৌ-বিহারের জন্য আধুনিক নৌ-যানসহ পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য নানান আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে এই ইকো-পার্কে। ইকো-পার্ককে ঘিরে ৫ মেঘাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন করা হবে। এই ইকো-পার্ক প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। ইতোমধ্যেই পর্যটকদের জন্য ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ফোর স্টার মানের আধুনিক রেষ্ট হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। যে রেষ্ট হাউজে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, হেলিপ্যাড, টেনিস কোর্ট এবং সুইমিং পুল আছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে পর্যটনের নতুন গন্তব্য হবে চর কুকরী-মুকরী।
চরফ্যাশন প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল হাসেম মহাজ জানান, বিশ্বখ্যাত আইফেল টাওয়ারের আদলে নির্মিত হয়েছে এই জ্যাকব ওয়াচ টাওয়ার। এটি চরফ্যাশনসহ ভোলাকে আলাদা পরিচিতি দেবে বলে আশা করছি। চরফ্যাশনের দক্ষিণে সাগর মোহনার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কুকরি-মুকরি, ঢালচর, তারুয়া সৈকত প্রকৃতির এক অপার সৃষ্টি। কয়েক বছরে ওই স্পটগুলো ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসছেন ওইসব এলাকায়। চর কুকরী-মুকরীর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে রয়েছে হরিণ, বানর, বন মোরগসহ নানাসাপ ও বন্য প্রাণী। রয়েছে বনবিভাগের গবেষনা কেন্দ্র কিন্তু পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো কোন স্থাপনা গড়ে ওঠেনি সেখানে। প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা অপার সৌন্দর্যের পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে চরফ্যাশনে নির্মিত হচ্ছে জ্যাকব ওয়াচ টাওয়ার এবং কুকরী-মুকরীর ইকো-পার্ক।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর