নিজস্ব প্রতিবেদক:
স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ করে তেমন একটা লাভবান না হওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের সরিষা চাষিরা ক্রমেই উচ্চ ফলনশীল সরিষা চাষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলায় এ বছর ৭৪ হাজার বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল বারি-১২, ১৪, ১৫ ও ১৭ উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষাই বেশি। এসব জাতের সরিষার ফলন প্রতি বিঘায় ৩০০ কেজি থেকে ৬০০ কেজি। যার বিপরীতে ১১ হাজার ৪৯২ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার জোতপাড়া গ্রামের বাহাদুর আলী জানান, স্বল্প সময়ের ফসল হিসেবে সরিষা অন্যতম।
তিনি বলেন, স্থানীয় জাতের সরিষার আাবাদ করে তেমন একটা লাভবান হওয়া যায় না। তাই আমি উচ্চ ফলনশীল সরিষা আবাদের দিকে বেশি আগ্রহী। এরই অংশ হিসেবে ৩ বিঘা মাটিতে আগাম উফশী জাতের সরিষা আবাদ করেছি। এখন পর্যন্ত গাছপাতা ভালো দেখা যাচ্ছে। আশা করছি, প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১২ মণ সরিষা পাওয়া যাবে।
বালিয়াডাঙ্গীর দুওসুও আমতলা গ্রামের সরিষা চাষী শাহজাহান আলী জানান, এ বছর দীর্ঘ শৈত্যপ্রবাহের কারণে আগাম উফশী জাতের সরিষার ভালো ফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে যে সরিষাগুলো দেরিতে লাগানো হয়েছে সেগুলোর ঘন কুয়াশার কারণে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেরিতে লাগানো সরিষার ফুল কুয়াশার কারণে ঝড়ে পড়ে। বিভিন্ন রকম রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে সরিষা ক্ষেত বাঁচাতে নিয়মিত স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
উচ্চ ফলনশীল বারি-১৫ জাতের সরিষার প্রদর্শনী প্লটে আবাদকারী বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পারুয়া গ্রামের অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত বাবু বলেন, আমি অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে উচ্চ ফলনশীল বারি-১৫ জাতের সরিষা আবাদ করেছি। স্থানীয় জাতের সরিষা হেক্টরে ৫০০ থেকে ৭০০ কেজি ফলে। কিন্তু বারি সরিষা প্রতি হেক্টরে ২ হাজার কেজি ফলবে বলে আশা করছি। স্থানীয় জাতের তুলনায় অনেক বেশি উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-১৫ সরিষা ফলবে। এতে আমি অনেক মুনাফা ঘরে তুলতে পারবো।
তিনি বলেন, আমি এ বছর লাভবান হলে আগামী বছর আমাদের গ্রামের অনেক কৃষক এ জাতের সরিষা আবাদের আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ সরিষা চাষ অত্যন্ত লাভজনক। আগামীতে এ অঞ্চলের কৃষক এ জাতের সরিষা আবাদে ঝুঁকে পড়বেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
বালিয়াডাঙ্গী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি উপ-সহকারী তপন মাহমুদ জানান, আগাম উফশী জাতের সরিষা বারি-১৫ এর ফলন অত্যন্ত ভালো হয়েছে। তবে যেগুলো লেট প্লান্ট অর্থাৎ দেশীয় জাতের সেগুলো ঘন কুয়াশার কারণে ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে।
তিনি বলেন, অতিরিক্ত শীতের কারণে সরিষার যে রোগ-বালাই দেখা দেয় সেগুলোর ব্যাপারে চাষীদের সচেতন করা হচ্ছে। এজন্য চাষীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, সরিষার অল্টারনারিয়া ব্লাইট দমনের জন্য রোভরাল প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে স্প্রে করার জন্য।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার চাষিরা উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষার আবাদের দিকে ঝুঁকছে। এতে স্থানীয় জাতের সরিষার চাইতে উফশী জাতের সরিষার উৎপাদন বেশি। বাজার মূল্য হিসেবে এ জাতের সরিষা আবাদ করে চাষীরা বেশি লাভবান হচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, এ বছর লাভবান হলে আগামী মৌসুমে আরো সরিষা চাষে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হবে। সরিষা চাষীদের প্রশিক্ষণ দিতে পারলে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহেরও সুযোগ থাকে। এ জাতের সরিষা হেক্টরে ৩৭ মণ থেকে ৫০ মণ পর্যন্ত উৎপাদিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সরিষা আবাদ সম্প্রসারিত হলে দেশে সরিষার আমদানি নির্ভরতা কমবে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খন্দকার মাওদুদুল ইসলাম জানান, প্রতি কেজি উফশী বারি ১৫ জাতের সরিষা থেকে ৫০০ গ্রাম অর্থাৎ প্রতি মণে ২০ কেজি তেল পাওয়া যায়। এ সরিষা আবাদের মাত্র ৯০ দিনের মাথায় ক্ষেত থেকে সরিষা সংগ্রহ করা যায়। তারপর ভুট্টাসহ অন্য আবাদ করা যায়।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ