আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের প্রধান বিচারপতিকে অভিশংসন বা সংসদীয় পদ্ধতিতে বিচার করা যায় কী না তা নিয়ে কয়েকটি বিরোধী দল চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। সিপিআইএম দল এ নিয়ে কয়েকটি বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। তবে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এখনও বিষয়টি নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি।
এর আগে দেশের কোনো প্রধান বিচারপতিকে কখনও অপসরণের কথা কেউ চিন্তাও করে নি বা কোনও বিচারপতিকে অভিশংসনের মুখোমুখিও হতে হয়নি। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের চার জ্যেষ্ঠ বিচারপতি দু’সপ্তাহ আগে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান বিচারপতির কর্মপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয় নি। তবে ভারতের কয়েকটি বিরোধী দল নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা শুরু করেছে। সিপিআইএম দলই মূলত এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে।
কেন প্রধান বিচারপতিকে অভিশংসনের মুখোমুখি করা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে সিপিআইএম-এর পলিটব্যুরো সদস্য মুহম্মদ সেলিম জানান, যখন জ্যেষ্ঠ চার বিচারপতি সংবাদ সম্মেলন করে বললেন যে, বেঞ্চ গঠন করা নিয়ে পক্ষপাতীত্ব হচ্ছে, তখনও আমরা চাইনি বিষয়টা নিয়ে বেশী বিতর্ক হোক। কারণ বিচারালয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করা যায় না।
মুহম্মদ সেলিম বলেন, অভিশংসনের প্রস্তাব আনা হবেই, এমন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনও আসে নি। তারা বিভিন্ন দলের সঙ্গে এখনও আলাপ আলোচনা করে যাচ্ছেন। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস বা সংখ্যার দিক থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দল তৃণমূল কংগ্রেস এখনও এ নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে নি।
কিন্তু সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছেন যে, আলোচনা ফলপ্রসূ হলে আসন্ন বাজেট অধিবেশনেই ওই প্রস্তাব আনা যেতে পারে। ভারতের কোনও বিচারককে অপসারণ করার বিষয়টি বেশ জটিল বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গাঙ্গুলি।
তিনি বলেন, অভিশংসনের জন্য প্রথমে যেটা দরকার তা হল প্রস্তাবের পক্ষে সংসদ সদস্যদের স্বাক্ষর। সেটা স্পীকারের কাছে জমা পড়বে। তিনি সেই প্রস্তাব পাঠাবেন একটা কমিটির কাছে। এই কমিটিতে কারা থাকবেন, সেটা ঠিক করার ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির একটা ভূমিকা থাকে।
কিন্তু এখানে যেহেতু তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনার কথা বলা হচ্ছে, তাই সেটা কী পদ্ধতিতে হবে সেটা বলা কঠিন। আগে তো কখনও প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এমন প্রস্তাব আসে নি। তিনি আরও জানান, ওই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে স্পীকারের অনুমতি সাপেক্ষে সংসদের উভয় কক্ষে আলোচনা হবে এবং ভোট নেওয়া হবে। ভোটে প্রস্তাব পাশ হলে তবেই সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। তিনিই সংশ্লিষ্ট বিচারপতিকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেবেন।
তবে অশোক গাঙ্গুলি বলেন, যে কারণে প্রধান বিচারপতির অপসরণের কথা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, তা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে আমি নিজেও সন্দিহান। কারণ প্রধান বিচারপতি যখন আইনজীবী ছিলেন, সেই সময়ের একটা সরকারি জমি নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ওই জমিটা শেষ পর্যন্ত তিনি পান নি। আর দ্বিতীয় যে কারণটা বলা হচ্ছে, তার প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়ে চারজন বিচারপতি চীফ জাস্টিসের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এই কারণে অভিশংসন করা কঠিন বলেই আমার ব্যক্তিগত মতামত।
এর আগে দুজন বিচারপতিকে পদ থেকে অপসারণ করার পদ্ধতি শুরু হলেও কাউকেই শেষ পর্যন্ত অভিশংসনের মুখোমুখি হতে হয়নি।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ