স্পোর্টস ডেস্ক:
হাভিয়ের মাচেরানোর প্রোফাইলে এখনে বার্সেলোনার খেলোয়াড় পরিচয়টাই লেখা আছে। তবে চাইলে এখনই তার আগে ‘সাবেক’ শব্দটি যোগ করে দিতে পারেন। কারণ, কাগজে-কলমে যাই লেখা থাকুক, এই আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার এখন আদতে চীনা ক্লাব হেবেই চীনা ফর্চুনের খেলোয়াড়। না, আনুষ্ঠানিক চুক্তি এখনো হয়নি। তবে কথা-বার্তা সব কিছুই চূড়ান্ত। এখন শুধু মাচেরানোর বার্সেলোনা ছেড়ে চীনে উড়ে গিয়ে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করার অপেক্ষা।
এই জানুয়ারিতেই বার্সেলোনা ছাড়ছেন মাচেরানো, এই আলোচনা অনেকদিন ধরেই চলছিল। অবশেষে ক্লাব বার্সেলোনাই নিশ্চিত করল, ন্যু-ক্যাম্প ছেড়ে মাচেরানো যোগ দিচ্ছেন চীনা সুপার লিগে। শুধু ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা নয়, মাচেরানোকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজনও করে ফেলেছে বার্সেলোনা। আজ বুধবারই মাচেরানোকে সংবর্ধনা দেবেন বন্ধু লিওনেল মেসিসহ বার্সেলোনার খেলোয়াড়-কোচরা। প্রিয় বন্ধুকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিতে গিয়ে মেসির বুকটা কি একবারের জন্যও কেঁপে উঠবে না! হানা দেবে না ‘একাকীত্বের’ হাহাকার! কিংবা প্রিয় বন্ধুকে ছেড়ে দিতে মাচেরানোর হৃদয়েও কি উতাল-পাতাল ঢেউ উঠবে না! উঠবে, অবশ্যই উঠবে!
‘পরম বন্ধুত্বের সংসার’ পেতে দীর্ঘ সাড়ে ৭টি বছর এক সঙ্গে কাটিয়ে দিলেন যারা, তাতে হঠাৎ বিচ্ছেদের করুণ সুরে হৃদয় কাঁপবেই। এক বন্ধুকে ছেড়ে গেলেও হেবেই চীনা ফর্চুনে গিয়ে মাচেরানো ঠিকই একজন আর্জেন্টাইন বন্ধুকে পাবেন। কারণ, ২০১৬ সাল থেকেই চীনা এই ক্লাবটিতে আছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড এজেকুয়েল লাভেজ্জি। কিন্তু মাচেরানোর বিদায়ের মধ্যদিয়ে বার্সেলোনা মেসি হয়ে পড়বেন আর্জেন্টাইনশূন্য। ঝেকে ধরবে একাকীত্বের অভিশাপ। হ্যাঁ, বলতে গেলে বার্সেলোনার সব খেলোয়াড়ের সঙ্গেই মেসির গভীর বন্ধত্ব। তবে স্বদেশি বন্ধুর টানটা বিশেষ। তাছাড়া আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে এই মাচেরানোই মেসির সবচেয়ে ভালোবন্ধু। বয়সে ৩ বছরের বড় হলেও ৩৩ বছর বয়সী মাচেরানো সব সময়ই ৩০ বছর বয়সী মেসিকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবেই দেখতেন। মেসি-মাচেরানোর বন্ধুত্ব কতটা গভীর, সেটা প্রথম টের পাওয়া যায় ২০১০ সালে।
মাচেরানো তখন লিভারপুলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু হুট করেই মেসি ক্লাব বার্সেলোনার কাছে দাবি করে বসেন, মাচেরানোকে ন্যু-ক্যাম্পে চাই। লিভারপুল দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়টিকে বিক্রি করতে না চাইলেও মেসির পীড়াপিড়িতে বার্সেলোনা মরিয়া হয়ে উঠে মাচেরানোকে কেনার জন্য। মেসিকে খুশি করতে মাচেরানো দলে ভিড়িয়েও ছাড়ে বার্সেলোনা। প্রিয় বন্ধুর এই আবদার রক্ষা করতে গিয়ে মাচেরানোকেও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আপাদমস্তক একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ছিলেন মাচেরানো। এই ভূমিকায় দারুণ সফলও ছিলেন তিনি। কিন্তু মেসির আবদারে বার্সেলোনায় এসে পছন্দের সেই পজিশনটা বিসর্জন দিতেও কার্পণ্য করেননি মাচেরানো। বার্সেলোনায় এসে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মাচেরানো হয়ে যান পুরোদস্তুর ডিফেন্ডার!
ভূমিকা বদলালেও মাচেরানোর সবচেয়ে বড় সুখ ছিল বন্ধু মেসির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলা। ২০১০ সাল থেকে সেই সুখটা দারুণভাবে উপভোগ করেছেন। অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বের পরম সুখটা উপভোগ করেছেন মেসিও। কিন্তু বয়স মেসি-মাচেরানোর সেই সুখ কেড়ে নিয়ে গেথে দিচ্ছে একাকীত্বের হাহাকার। হ্যাঁ, বয়স ৩৩ হয়ে গেছে। বয়সের ভারের কারণেই বার্সেলোনা ছাড়ছেন মাচেরানো। আর্জেন্টাইন তারকা নিজেই বুঝতে পারছিলেন, বার্সেলোনার মতো বিশ্বসেরা ক্লাবের চরম প্রত্যাশার চাপ সামলাতে শরীরটা আর সায় দিচ্ছে না। শরীরটা একটু আয়েস চায়। তাই বার্সেলোনা ছেড়ে কম চাপের চীনা লিগে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছে বার্সেলোনাও। পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতেই তাই মাচেরানো যোগ দিচ্ছেন হেবেই চীনা ফর্চুনে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই চুক্তিপত্রে সই করে মাচেরানো হয়ে যাবেন হেবেই ফর্চুনের খেলোয়াড়।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি
Daily Deshjanata দেশ ও জনতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর

