২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:৪৩

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বিলম্ব : ঢাকার ওপর দায় চাপাল নেইপিদো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন শুরু হয়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত হওয়ার তথ্য বাংলাদেশ জানানোর পর মিয়ানমারের সরকারি এক কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ বিলম্ব হওয়ার ঘোষণা দিলেও ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনে প্রস্তুত আছে তারা। একই সঙ্গে বিলম্বিত হওয়ার দায় বাংলাদেশের ওপর চাপিয়েছেন তিনি।

দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের কর্মকর্তারা সোমবার বলেছেন, এখন বেশ কিছু ইস্যু অমীমাংসিত রয়েছে। এমনকি প্রত্যাবর্তনের পর রোহিঙ্গারা আবারো ফিরে আসতে বাধ্য হতে পারেন বলে উদ্বেগ রয়েছে বাংলাদেশের।

 মঙ্গলবার মিয়ানমারের ইউনিয়ন মন্ত্রী থং তুন সাংবাদিকদের বলেছেন, সীমান্ত পেরিয়ে যারা আসবে তাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছে তার দেশ। গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জেরে সেনাবাহিনী ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুরু করে। নৃশংস এ অভিযানে ৬ লাখ ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে।

থং তুন বলেছেন, সম্প্রতি দিনে ৩০০ জনকে ফেরত নেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মিয়ানমার। এছাড়া প্রথম ধাপের কাজের অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে।

দেশটির সামাজিক কল্যাণমন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ে বলেছেন, যাচাই-বাছাইয়ের পর মিয়ানমারের ফিরতে পারবেন, এমন ৭০০ রোহিঙ্গা ও ৪০০ হিন্দু শরণার্থীর তালিকা ঢাকাকে দিয়েছে নেইপিদো। শুধুমাত্র তারাই মিয়ানমারে ফিরতে পারবেন; যারা তাদের পরিচয়-সংক্রান্ত নথি দেখাতে পারবেন। তবে অধিকাংশ রোহিঙ্গার কাছে এ নথি নেই।

রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রহীন মুসলিম জাতিগোষ্ঠী বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে নির্যাতিত সংখ্যালঘু একটি গোষ্ঠী হচ্ছে এ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ভাষার মিল থাকায় সংখ্যালঘু সুন্নিপন্থী এ গোষ্ঠীকে ঘৃণা করেন মিয়ানমারের বৌদ্ধরা।

মিয়ানমারের বৌদ্ধরা এসব রোহিঙ্গাকে অবৈধ অভিবাসী মনে করে। এমনকি মিয়ানমারে কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করে এলেও তাদের বাঙালি হিসেবে ডাকে স্থানীয়রা। রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত রাখাইন রাজ্যে বসবাস করলেও সে দেশের নাগরিকত্ব নেই তাদের।

এছাড়া রোহিঙ্গাদের চলাচল ও কাজের ওপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, ২০১২ সালে দেশটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গারা পালাচ্ছে; এখনো তা অব্যাহত রয়েছে।

কক্সবাজারের বালুখালি রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেয়া আলম নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া আমরা কীভাবে মিয়ানমারে ফেরতে যেতে পারি। যদি আমাদের জ্বালিয়ে দেয়া বাড়ি-ঘর ফেরত দেয়া হয় তবেই আমরা ফিরবো।

বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার আবাস হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ও রোহিঙ্গারাও বলছেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এখনো অনেক বাকি রয়েছে। তবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুত আছে।

উইন মিয়াত আয়ে বলেন, আমাদের কোনো সমস্যা নেই, মিয়ানমার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তত। তবে বাংলাদেশ সমস্যায় রয়েছে, যে কারণে শরণার্থীদের ফেরতের কাজ বিলম্ব হচ্ছে।

সূত্র: এপি, মেইল।

দৈনিক দেশজনতা /এন আর

 

প্রকাশ :জানুয়ারি ২৩, ২০১৮ ৮:৪৫ অপরাহ্ণ