নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে এমপিওভুক্ত এক হাজারের অধিক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট চলছে। এদিকে রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরামের ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা টানা সপ্তমবারের মতো আমরণ অনশন অব্যাহত রেখেছেন।
আন্দোলনকারীদের প্রেস সচিব এনামুল হক বলেন, ‘জাতীয়করণের দাবিতে আমরা টানা ১১দিন আজকে খোলা আকাশের নিচে প্রচণ্ড শীতে রাত অতিবাহিত করছি। কিন্তু তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনরকম সাড়া না পেয়ে আজকে সারা দেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে। আমরা সারা দেশে খোঁজ নিয়ে দেখেছি ৩৮ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক হাজারের অধিক প্রতিষ্ঠানে জাতীয়করণের দাবিতে ধর্মঘট চলছে। আশা করি সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবেন।’
গত ১০ জানুয়ারি থেকে শিক্ষকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পরে গত ১৫ তারিখ একই স্থানে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেছে। এদিকে তীব্র শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে টানা ১১দিন অতিবাহিত করলেও সরকারের দিক থেকে কোনরকম সাড়া মেলেনি বলে জানা যায়।
সরেজমিনে রোববার সকাল ১১টার দিকে দেখা যায়, জাতীয়করণের দাবিতে কয়েক শতাধিক শিক্ষক রাস্তায় শুয়ে-বসে আছে। এদের ২০-২৫ জনের মতো নারী রয়েছেন। অনশনে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭৭ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে বিভিন্ন মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে সুনামগঞ্জের সালমা আক্তার গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে জাতীয়করণ সংক্রান্ত ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু আমরা সুস্পষ্ট নীতিমালা ও সময়সীমা ঘোষণা করে শিক্ষকদের দাবি পূরণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (নজরুল), বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (শাহ আলম-জসিম), জাতীয় শিক্ষক পরিষদ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন সমন্বয়ে গঠিত ৬টি বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরামের ব্যানারে তারা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছে।
বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াঁজো কমিটির আহ্বায়ক মো. আব্দুল খালেক বলেন, এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে সারাদেশের প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। দেশের ৯৭ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তারা সেসব প্রতিষ্ঠান চালালেও নামেমাত্র বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তা দিয়েই মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অথচ ৩ শতাংশ সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা উচ্চমানের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এ কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করতে হবে। এ দাবিতে আমরা রাজপথে নেমেছি।
এর আগে ৩১ ডিসেম্বর থেকে টানা ৬ দিন আমরণ অনশন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করার আশ্বাস দিলে শিক্ষকরা অনশন প্রত্যাহার করেন। এরপর ৯ জানুয়ারি থেকে টানা ৮দিন আমরণ অনশন শেষে ইবতেদায়ী মাদ্রাসাকে শিক্ষামন্ত্রী জাতীয়কারণের প্রক্রিয়ার আশ্বাস দিলে তারাও অনশন প্রত্যাহার করে ফিরে যায়। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ