নিজস্ব প্রতিবেদক:
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবারও যুক্তিতর্ক চলবে। তবে ওইদিন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির হতে হবে না বলে জানিয়েছেন আদালত। বুধবার পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্ক চলবে। ম্যাডাম জামিনে থাকবেন পরবর্তী তারিখ পর্যন্ত। কাল (বৃহস্পতিবার) মামলার পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করা হবে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। তবে বৃহস্পতিবারও ওই মামলার যুক্তিতর্ক চলবে। মঙ্গলবার বিএনপি প্রধানের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। এদিন তার পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বুধবার ওই মামলার অপর আসামি ব্যবসায়ী শরিউদ্দিনের পক্ষে তার আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবারও তার যুক্তিতর্ক চলবে।
এর আগে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালত-৫ এ পৌঁছান। এর পর ১১টা ১৮ মিনিটে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুনীর্তি মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হয়।
এর আগে সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটে বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের নিজ বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা হন বলে জানিয়েছিলেন চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।
খালেদা জিয়ার হাজিরা ঘিরে আদালত ও এর আশপাশের এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া আদালতের প্রধান ফটকে স্ক্যানার বসিয়ে তল্লাশি করে ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে।
এদিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ওই দুই মামলার পরবর্তী তারিখ ১৬, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি ধার্য করা হয়। পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান এ দিন ধার্য করেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দশম দিনে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি যুক্তিতর্ক শুরু করেন।
এর আগে প্রথম দিন রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এর পর খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবীরা নয় দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে রেজ্জাক খান তিন দিন, খন্দকার মাহবুব হোসেন এক দিন, এজে মোহাম্মদ আলী চার দিন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার দুই দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
পরে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন— খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এ ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অপর একটি মামলা করে দুদক।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন— মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ