আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পর এর দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবান। ঊর্ধ্বতন তালেবান জঙ্গি নেতা আবু মনসুর অসিম মুফতি নূর ওয়ালির লেখা নতুন এক বইয়ে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এই প্রথম ঘটনার দায় স্বীকার করল।
২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে একটি নির্বাচনী সমাবেশ শেষে ফেরার পথে আত্মঘাতী হামলায় বেনজির নিহত হন। বেনজিরের গাড়ি বহরের কাছে গিয়ে তাকে গুলি করে এবং আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় বিলাল নামের এক কিশোর। পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মুশাররফ প্রশাসন টিটিপি’কে বেনজির হত্যার জন্য দায়ী করেছিল। কিন্তু জঙ্গি গোষ্ঠীটি এতদিন ধরে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখ খোলেনি। উল্টো এ হত্যা মামলায় মুশাররফের নাম চলে এসেছে।
মুশাররফ অভিযোগ অস্বীকার করে আসলেও গত বছর অগাস্টে রাওয়ালপিন্ডির সন্ত্রাস বিরোধী আদালত তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করে। একই মাসে বেনজির হত্যা মামলা থেকে খালাস পায় টিটিপি’র ৫ সন্দেহভাজন জঙ্গিও।
শেষ পর্যন্ত তালেবান নেতা মনসুর তার ‘ইনকিলাব মেহসুদ সাউথ ওয়াজিরিস্তান: ফ্রম ব্রিটিশ রাজ টু আমেরিকান ইমপেরিয়ালিজম’ বইয়ে বেনজির হত্যাকাণ্ডে তার দলের জড়িত থাকার দাবি করলেন। গত বছর ৩০ নভেম্বরে প্রকাশিত হয়েছে বইটি।
বহু তালেবান নেতার ছবি সম্বলিত ৫৮৮-পাতার এ বইয়ের সংস্করণ রোববার অনলাইনে পোস্ট করা হয়েছে। এতে মনসুর লিখেছেন, বেনজির ভুট্টোকে হত্যার জন্য বিলাল ওরফে সাঈদ এবং ইকরামুল্লাহ নামে দুই জঙ্গিকে পাঠানো হয়েছিল। বিলাল প্রথমে তার পিস্তল দিয়ে বেনজির ভুট্টোকে গুলি করে, গুলি তার ঘাড়ে লাগে। তারপর সে সমাবেশে আসা লোকজনের ভিড়ে আত্মঘাতী হামলা চালায়।
দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের আদিবাসী এলাকার অধিবাসী ইকরামুল্লাহ সেখান থেকে বেঁচে ফেরে। সে এখনও বেঁচে আছে বলে বইতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই হামলার পর মুশাররফ প্রশাসন একটি অডিও প্রকাশ করে। যেখানে দুই তালেবান সদস্যকে ভুট্টোর মৃত্যু নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়।
রাওয়ালপিন্ডিতে হামলার দুই মাস আগেই করাচিতে আরেকটি নির্বাচনী সমাবেশে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে বেনজিরকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল বলেও বইতে দাবি করা হয়। দুইটি আত্মঘাতী হামলায় সেবার প্রায় ১৪০ জন নিহত হয়। মুশাররফ প্রশাসন বেনজিরের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তার উপর সহজে হামলা চালানো সম্ভব হয়েছে বলেও বইতে লেখেন আবু মনসুর।
তার ভাষায়, ‘করাচিতে বেনজির ভুট্টোর নির্বাচনী সমাবেশে হামলার পরও মুশাররফ প্রশাসন বেনজিরের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। যে কারণে রাওয়ালপিন্ডিতে আবারও তার সমাবেশে হামলা করা সহজ হয়ে গিয়েছিল।’
এদিকে তালেবানের এই দাবি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেনজিরের দল পিপলস পার্টি (পিপিপি)। পিপিপির মুখপাত্র ফারহাতুল্লাহ বাবর এক বিবৃতিতে বলেন, তালেবানদের এ দাবি দলটির সন্দেহকে জোরদার করেছে যে জঙ্গিরা ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য’ ব্যবহৃত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতে চাই এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের মূল হোতা কে ছিলেন। মাস্টারমাইন্ড কারা ছিল তাদের নাম প্রকাশ করা উচিত। তারাই জঙ্গিদের এ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করেছে।’
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ
Daily Deshjanata দেশ ও জনতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর

