নিজস্ব প্রতিবেদক:
তীব্র শীতে মানুষের বাড়িতে থাকা যখন কষ্টকর, তখন মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা বেতন তথা জাতীয়করণের দাবিতে খেলা আকাশের নিচে শুয়ে দিনরাত যাপন করছেন। টানা ১৫ দিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সকল স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা।
প্রথমে গত ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এতে সরকারের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে ৯ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন। আজ সোমবার পর্যন্ত টানা ৭ দিন ধরে আমরণ অনশন এবং তীব্র শীতের কারণে অধিকাংশ শিক্ষক শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেছেন। এর মধ্যে ১৬৮ জন শিক্ষককে অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গুরুতর হওয়ায় কয়েকজনকে মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, সবাই খোলা আকাশের নিচে শুয়ে আছেন একটা কম্বল গায়ে দিয়ে। শীতের ঠাণ্ডায় যেন কথা বলতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। অনেককে আবার অসুস্থতার জন্য স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।
সেখানে উপস্থিত একজন সেচ্ছাসেবক চিকিৎসার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, একদিকে না খাওয়ার কারণে যেমন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে সবাই, অন্যদিকে তীব্র শীতের কারণে শীতজনিত বিভিন্ন রোগ সবার ভেতরে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, আন্দোলনকারী শিক্ষকরা গতকাল রোববার এক আলোচনায় বসে শিক্ষামন্ত্রী সাথে। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর ‘বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেয়’ এবং ফিরে যেতে বলে। কিন্তু মন্ত্রীর কথা প্রত্যাখ্যান করে সুস্পষ্ট ষোষণা ছাড়া আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
গাইবন্ধার হামিদা বেগম বলেন, ‘১ তারিখ থেকে এখানে আছি, অবস্থান করছি। পরে ৯ তারিখ থেকে অনশন করছি, শীতের মধ্যে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ১৮ বছর ধরে বেতন না থাকার চেয়ে এ কষ্ট কিছুই না। আমরা জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।’
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাদের সকলে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেছে। প্রায় সবার শীতজনিত বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া না খাওয়ার কারণে আরো দূর্বল হয়ে গেছি, যার কারণে অনেকের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।’ আমরা বলতে চাই, ‘জাতীয়কারণের ঘোষণা ছাড়া আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করব না।’
জানা যায়, মাদরাসা বোর্ডের নিবন্ধন পাওয়া ১০ হাজারের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা আছে। এতে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। মাত্র এক হাজার ৫১৯টি ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান শিক্ষক দুই হাজার ৫০০ টাকা এবং সহকারী শিক্ষকরা দুই হাজার ৩০০ টাকা ভাতা পান। বাকি শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ