নিজস্ব প্রতিবেদক:
শীতের কাঁপুনিতে কাবু হয়ে পড়েছে সারাদেশের মানুষ। গত কয়েকদিনের অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহ ও হিমেল হাওয়ায় ইতোমধ্যে সারাদেশে ৩০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। টানা শৈত্যপ্রবাহে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল ও কর্মজীবী মানুষেরা। সারাদেশের তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করলেও কমছে না শীতের তীব্রতা। তীব্র শীতে মানুষের অবস্থা এখনো জবুথবু।
সোমবার সকাল সাড়ে আটটায় কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় সর্বনিম্ন ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল যশোরে সর্বনিম্ন ৭.২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। আগামী বুধবারের পর তাপমাত্রা বাড়বে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এবারের শীত অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। বায়ুমণ্ডলের নিচের স্তরের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করায় দিনভর ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে দেশজুড়ে। এ কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। তবে আবহাওয়াবিদরা এটাকে প্রকৃতির স্বাভাবিক আচরণ বলছেন। কয়েক বছর পরপর আবহাওয়ার এমন আচরণ দেখতে পাওয়া যায়। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় বাংলাদেশের ওপর বেশি বিস্তৃত থাকায় এবার শীতের তীব্রতা একটু বেশি। তবে আগামী বুধবার নাগাদ দেশে শীতের তীব্রতা আর থাকবে না, তাপমাত্রা বেড়ে যাবে।
জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, আজকে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন দেশে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে। তবে আগামী বুধবার নাগাদ তাপমাত্রা বেড়ে যাবে।
ওমর ফারুক আরও বলেন, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় বাংলাদেশের ওপর বেশি বিস্তৃত থাকায় এবার শীতের তীব্রতা একটু বেশি। বায়ুমণ্ডলের নিচের স্তরের পরিস্থিতি ব্যতিক্রম, যা সচারাচর দেখা যায় না। একেবারে নিচের স্তরে বায়ুর ঘুর্ণনের ফলে সৃষ্ট ব্যতিক্রম পরিস্থিতির কারণেই ঘন কুয়াশা পড়ছে, যা স্থায়ী হচ্ছেও দিনভর। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বাতাসের গতিবেগ। ফলে শীতের অনুভূতি কোথাও কোথাও একটু বেড়েছে।
এই আবহাওয়াবিদ আরও বলেন, আগামী বুধবার নাগাদ দেশের তাপমাত্রা বাড়বে। তবে দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত থাকবে। ঘন কুয়াশাও পড়বে এ সময়।
এদিকে সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে থাকায় দেশের অধিকাংশ জেলা কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের অবস্থা বেশি ভয়াবহ। সকালে দশ হাত দূরে কী আছে তাও দেখা যায় না। দেখা মিলছে না সূর্যের। দুপুরের দিকে সূর্যের অবস্থান কিছুটা দেখা গেলেও তার তীব্রতা খুব একটা উপভোগ করা যায় না।
তীব্র কুয়াশার কারণে দেশের অধিকাংশ মহাসড়কে গাড়িগুলোকে দিনের বেলায় আলো জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। হাড় কাঁপানো শীতের তীব্রতায় কাতর হয়ে পড়েছেন কর্মজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ। টানা শৈত্যপ্রবাহে মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা ও কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। উত্তরের হিমেল হাওয়া বয়ে যাওয়ার কারণে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে চলা মৃদু ও মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে জনজীবনে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। টানা শৈত্যপ্রবাহে নাকাল হয়ে পড়েছে গোটা উত্তরাঞ্চল। ভোর ও সন্ধ্যার পর হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ। রাস্তায় কমে গেছে যান চলাচল। সন্ধ্যার পর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে বেশিরভাগ দোকানপাট ও হাট-বাজার। গ্রামগুলোতে শীতের প্রকোপ আরও বেশি। নানান রোগে ভুগছে শিশু ও বয়স্করা।
সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস জানিয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী লঘুচাপ অবস্থান করছে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে। বাতাস উত্তর/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বইছে। বিরাজমান শৈত্যপ্রবাহ পরিস্থিতি দেশের আরও কিছু এলাকা থেকে প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিরাজমান শৈত্যপ্রবাহ পরিস্থিতি দেশের আরও কিছু এলাকা থেকে প্রশমিত হতে পারে। সারা দেশের রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ