নিজস্ব প্রতিবেদক:
বন্যায় ফসলহানির পর সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবার ও হতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য সরকার যে চাল দিচ্ছে তার একটি অংশ মেরে দিয়ে খোলাবাজারে বেচে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় পরিবেশকদের বিরুদ্ধে। কয়েকটি ঘটনায় ধরা পড়ার পর পরিবেশক বাতিল করা হলেও অভিযুক্তদের আর কোনো সাজা হয়নি। ২০১৭ সালে হাওরে বন্যায় ফসলহানির ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়েছে সারা দেশেই। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলাকায় দিয়ে পরবর্তী ধান না উঠা পর্যন্ত সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
জেলায় গত বছরের এপ্রিল থেকে এক হাজার ১১০টি কেন্দ্রে পরিবেশকের মাধ্যমে প্রথমে ১৫ টাকা কেজি দরে ও এখন ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি হচ্ছে। জন প্রতি পাঁচ কেজি করে চাল কিনতে পারার কথা। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত বহু মানুষ অভিযোগ করছেন, ওএমএসের চাল নামমাত্র বিতরণ করে খোলা বাজারে বেশি দামে বেচে দিচ্ছে পরিবেশকরা। মাঝেমধ্যে ধরা পড়লেও বেশিরভাগ রয়ে গেছে অধরা। আর এ কারণে ভালো একটি উদ্যোগ নিয়েও সরকারের বদনাম হচ্ছে। এবার বন্যায় সারাদেশে ফসলহানির কারণে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে চাল পাচার করে খোলাবাজারে বেচে দিলে বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি জেলার শাল্লা উপজেলার (১২ জানুয়ারি) সহদেবপাশা গ্রামের পাশে চাল বোঝাই একটি নৌকা ভেড়ে। এ সময় কৌতুহলী কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা ট্রলারের ভেতরে চালের বস্তায় ‘সরকারি চাল’ লেখা দেখতে পান। আর তা দেখে অন্যদেরকে ডাতকে শুরু করার পর পর নৌকার মাঝি ও শ্রমিকরা ৬৯ বস্তা চাল নদীর পারে নামিয়ে নৌকা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ চালগুলো জব্দ করে।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন গত ১২ জানুয়ারি চাল আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলার সহদেবপাশা গ্রামের পাশে ৬৯ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে। তবে চাল বহনকারী কাউকেই পাওয়া যায়নি। এই চাল পাচারে কারা জড়িত তা গুরুত্ব সহকারে বের করার চেষ্টা চলছে।
গত বছরেরও জামালগঞ্জ উপজেলায় চাল পাচারের সময় ২০ বস্তা ওএমএসের চাল আটক করা হয়। ওই চালের পরিবেশক সুব্রত পুরকায়স্থ। জুনে দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নে পরিবেশক যুবলীগ নেতা রনি দাসের ১৭ বস্তা চাল পাচারের সময় আটক করা হয়। এ ঘটনায় তার ডিলারশিপ বাতিল হয়। এই মাসেই ছাতক উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নে পাচারের সময় আটক করা হয় পরিবেশক জাহাঙ্গীর আলমের ২০ বস্তা চাল। তারও ডিলারশিপ বাতিল হয়। জগন্নাথপুর উপজেলার ওএমএসের চাল পাচারের কারণে বাতিল হয়েছে যুবলীগ সদস্য আব্দুল বারীর ডিলারশিপও।
জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকারিয়া মোস্তফা বলেন, ‘আমি ঘটনা জানতে পেরেছি। জব্দকৃত চালের নমুনা সংগ্রহ করেছি। কার চাল কীভাবে ওখানে গেল তা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এসব অনিয়মের কারণে কয়েক জনের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। দুই জনের নামে মামলা হয়েছে।’
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ