২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:১৩

ঠাকুরগাঁওয়ে শীত তাড়ানোর আগুনে পুড়ল ২০ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

তীব্র শীত থেকে বাঁচতে খরকুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে গত দুই সপ্তাহে অন্তত ২০ জন ঝলসে গেছেন। এদের মধ্যে কারো হাত কারো পা আবার কারো শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। আহতদের ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। তবে এই জেলায় আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য ভালো ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেছে। পাশের জেলা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট থাকলেও সেখানে রোগীর চাপ এত বেশি যে এই শীতেও অনেকের ঠাঁই হয়েছে বারান্দায়, তাও আবার মেঝেতে।

আগুন পোহাতে গিয়ে ঝলসে গিয়ে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে যারা ভর্তি আছেন তারা হলেন- উপজেলার ছিট চিলারং গ্রামের শরিফা খাতুন (৮০), বগুড়া পাড়ার হাবিবা (২০ মাস), গোয়ালপাড়া মহল্লার আব্দুল মান্নান (৫০), মহেষপুর গ্রামের ইজার উদ্দিন (৬৫), কিসমত কেশুরবাড়ী গ্রামের আঁখি (২১), বিশ্বাসপুর গ্রামের আরজিনা (৪), শহরের আশ্রমপাড়া মহল্লার মফিজুল (৪৮), বালিয়াডাঙ্গীর জবা (৫), পাশ্ববর্তী পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার আমিনা (২০), দেবীপুর উপজেলার আজিজুল হক (৬৫), দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গার আরজিনা (২৮), ঠাকরগাঁও সদর উপজেলার বিহারীপাড়ার শরিফা (৯ মাস), দৌলতপুরের বানু বেগম (৩৮), বালিয়াডাঙ্গীর ভানোর গ্রামের নয়ন (২৮ ও পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ মাহানপুরের দেবী (৪)।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার সুব্রত কুমার সেন বলেন, ‘শীতের কারণে গত কয়েকদিন শিশুদের সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, ইত্যাদি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তবে সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে পুড়ে যাওয়া রোগীর সংখ্যাও।’

এবার উত্তরের জেলাগুলোতে শীত পড়েছে নজিরবিহীন। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে ঊষ্ণতার আশায় জ্বালানো আগুন কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আগুন পোহাতে গিয়ে এরই মধ্যে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১০ জনের। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আরও ৫০ জনেরও বেশি। আবার আগুন পোহানো নিয়ে বিবাদে ছুরিকাঘাতে কুষ্টিয়ায় মারা গেছেন দুই জন।

ঠাকুরগাঁওয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে। এখানে তাপমাত্রা ৩ থেকে ১২ ডিগ্রিতে উঠানামা করছে। সেই সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় জমে যাওয়ার অবস্থা মানুষের। জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। নিম্ন আয়ের খেটো খাওয়া মানুষরাও এই আবহাওয়ায় কাজে বেরুতে পারছে না।

দারিদ্র্যপীড়িত এই অঞ্চলের মানুষদের শীতের কাপড় জমানো থাকে না খুব একটা। আর যেসব কাপড় আছে, সেগুলোও শীত মোকাবেলায় যথেষ্ট না। এই অবস্থায় শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে আগুন জ্বেলে তার পাশে বসে উত্তাপ নেয়ার চেষ্টা চোখে পড়ে এখানে সেখানে। কিন্তু অনেকেই আবার চলে যাচ্ছেন আগুনের কাছাকাছি। আর এতেই আগুন ধরে যাচ্ছে কাপড়ে। শীতের কাপড়গুলো সহজে দাহ্যবলে তা ছড়িয়ে পড়ে শরীরে।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, তারা গরিবদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন। কিন্তু আগুন পোহাতে গিয়ে গদ্ধ হওয়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে তাদের। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘শীত নিবারণে আগুন পোহাতে গিয়ে যেন কেউ যেন দগ্ধ না হয় সে ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিতে ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে জনগণকে সজাগ করা হবে। ’

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :জানুয়ারি ১৫, ২০১৮ ১২:৫৩ অপরাহ্ণ