লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
সর্ব উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে ঘন কুয়াশার পাশাপাশি মৃদু শৈত্য প্রবাহ ও হাড়কাঁপানো শীত অব্যাহত রয়েছে। গত প্রায় ১০দিন থেকে এ অবস্থা বিরাজ করায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে, শীতে কাঁপছে জেলার ১৬ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রচণ্ড শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, কোল্ড এলার্জি ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগ বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে জেলার পাঁচ উপজেলার তিস্তা-ধরলাপাড়ের হাজার হাজার হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল খেটে-খাওয়া মানুষজন। তাদের ঘরে না আছে খাবার না আছে কোনো শীতবস্ত্র। সরকারি-বেসরকারিভাবে গোটা জেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার শীতার্ত মানুষের জন্য এ পর্যন্ত যে পরিমাণ শীত বস্ত্র-কম্বল বিতরণ করা হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে, সদর উপজেলার তিস্তা নদী সংলগ্ন রাজপুর চরাঞ্চল এলাকায় আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে গত রোববার রাতে সুখময়ী রানী (৭৬) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই এলাকার মৃত. বিশ্বেশর রায়ের স্ত্রী। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে শনিবার দুপুরে খড় জ্বালিয়ে আগুন পোহানোর সময় দগ্ধ হন সুখময়ী রানী। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে লালমনিরহাট সদর ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে বলে জানিয়েছেন রাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন।
সোমবার সকালে সরেজমিনে তিস্তা-ধরলা নদীর চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে, ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হতদরিদ্র মানুষ থরথর করে কাঁপছেন। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। অনেকে আবার সকালে আগুনে শরীর গরম করে কাজে বের হচ্ছেন। এ সময় কথা হয় তিস্তা নদীবেষ্টিত আদিতমারী উপজেলার মহিষ খোচা গ্রামের আলী মিয়া(৬৬), মজিদ আলী (৬০) ও ফাতেমা বেগমের(৪০) সঙ্গে।
তারা জানান, প্রচণ্ড ঘন কুয়াশা আর কনকনে বাতাসের কারণে তারা ঘর হতে বের হয়ে কাজ করতে পারছেন না। শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড় না থাকায় তারা আরো বিপাকে পড়েছেন। বাজারে গরম কাপড়ের খোলা দোকানে দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারছেন না তারা। শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্যহীন এসব শীতার্ত মানুষ তাকিয়ে থাকেন সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতার উপর। কিন্তু এখন পর্যন্ত যেটুকু শীতবস্ত্র মিলেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানালেন তারা। চলতি মাসের ২০ তারিখের পর আবারও দ্বিতীয় দফায় মৃদু শৈত্য প্রবাহ হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। তাই সমাজের বিত্তবানসহ প্রশাসনের কাছে শীতবস্ত্র প্রদানের দাবি জানিয়েছেন এখানকার দরিদ্র পরিবারের ভুক্তভোগীরা।
লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার সুজাউদ্দৌলা জানান, জেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় শীতবস্ত্র হিসেবে এ পর্যন্ত ৩২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো কিছু শীতবস্ত্র এসেছে তা বিতরণ চলছে। লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী বলেন, শীতের প্রকোপ দেখা দেয়ায় ঠান্ডাজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। আমরা সকলকে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করার পরামর্শ দিচ্ছি।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি