নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাড়ির পাশের পতিত জমিতে লাগান বিভিন্ন ঔষধি গাছ। ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির প্রশিক্ষক ও এক ধানে দুই চাল বিশিষ্ট নতুন জাতের ধানের উদ্ভাবন করে এলাকার সফল কৃষক হিসেবে ইতোমধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছেন। আর এই গল্পটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মহেশ্বরচাঁদা গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেনের। মকবুল হোসেন (৭২)। একজন আদর্শবান কৃষকের নাম। মহেশ্বরচাঁদা গ্রামের সুপরিচিত কৃষক তিনি। ঔষধি গাছ, ভার্মি কম্পোস্ট ও তিন ধরনের ধান উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছেন তিনি। এরমধ্যে এক ধানে দুই চাল বিশিষ্ট নতুন জাতের ধানের জাত উদ্ভাবন করে ব্যাপক আলোচিত হন তিনি।
১৯৪৫ সালে এক গরীব কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মকবুল। চরম দারিদ্র্যের জন্য পড়ালেখা করতে পারেননি। মাত্র ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বাবার মৃত্যুর পর ১৫ বছর বয়সে তিনি শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন কাজ শুরু করেন। ১৮ বছর থেকে রিকশা চালানো শুরু করেন। প্রায় ১৫ বছর তিনি রিকশা চালান। ১৯৮২ সালে যখন তার বয়স ৩৭, গ্রামবাসী গ্রামের উন্নয়নের জন্য একত্রিত হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।
তারা প্রথমে সেচের জন্য মাঠের মধ্যে একটি কূপ খনন করেন। ভালোভাবে চাষ করার জন্য গ্রামে একে অপরকে জমি বিনিময় শুরু হয়। ১৯৯৩ সালে গ্রামের বিভিন্ন অংশে শ্যালোমেশিন স্থাপন শুরু করেন অধিক ফসল ফলানোর জন্য। গ্রামবাসীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠেন।
কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, ২০০০ সালে ঢাকা থেকে ড. গুল হোসেন নামে একজন কৃষিবিদ আমাদের গ্রামে আসেন। উনার পরামর্শে এবং স্থানীয় এনজিও হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের সহযোগিতায় আমরা ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও সার সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। এখন কালীগঞ্জে প্রায় ৪০ হাজার কৃষক ভার্মি সার তৈরি ও জমিতে ব্যবহার করেন। আমি ২০১৭ সালে ৮ হাজার টাকা খরচ করে ২০ ঢিপি ভার্মি সার উৎপাদন করি। পরে সেগুলো বিক্রি করি ১৬ হাজার টাকায়। তিনি তিন ধরনের ধান উদ্ভাবন করেছেন।
তিনি বলেন, বিশেষ পদ্ধতিতে দুইটি ধানের ক্রস করিয়ে একটি ধানে দুই চাল বিশিষ্ট নতুন জাতের ধানের জাত উদ্ভাবন করি। পাশাপাশি তিনি বাড়িতে ১০৮ ধরনের ঔষধি গাছ লাগিয়েছেন। তিনি গ্রামের মানুষের বিভিন্ন রোগের ওষুধ ও গাছ বিনা টাকা প্রদান করেন। ‘আমার একসময় কিছুই ছিল না। এ পর্যন্ত ২ বিঘা জমি কিনেছি। একটা ইটের বাড়িও তৈরি করেছি। সৎভাবে আয় করে বেশ সুখী জীবনযাপন করছি।’ যোগ করেন এ সফল কৃষক।
তিনি ভার্মি কম্পোস্ট সারের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই উপজেলায় একটি ভালো পরিবর্তন আনেন। এলাকায় রাসায়নিক সারের বিভিন্ন ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করে তোলেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রশিক্ষণ দিয়ে ৩৩ জেলায় ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির ৩৩টি ফার্ম গড়ে তুলেছেন। বেশির ভাগই এখন আত্মনির্ভরশীল। গ্রামের ১৫১টি পরিবার এখন ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করে বলে তিনি জানান।
কালীগঞ্জের সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ স্কুলের শিক্ষক আলিম উদ্দিন জানান, মকবুল রোগীদের বিনামূল্যে ঔষধি গাছ দেন। এমনকি তিনি ওষধি গাছ দিয়ে বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরি করে রোগীদের প্রদান করেন। কালার বাজারের সিদ্দিক মিয়া বলেন, তার(মকবুল) ওষুধ ভালো কাজ করে। তার ওষুধ খেয়ে আমার রোগ ভালো হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলার দাপনা গ্রামের সুখজান খাতুন বলেন, আমি মকবুল হোসেনের কাছ থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখন সার বিক্রি করে ভালো উপার্জন করছি।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুল করিম জানান, এই উপজেলার একজন আদর্শবান কৃষকের নাম মকবুল হোসেন। তিনি খুব উদ্যোগী ও চাষের ক্ষেত্রে আন্তরিক। তিনি তিন প্রজাতির ধান আবিষ্কার করেছেন। তার আবিষ্কার করা ধান এলাকার কৃষকরা লাগাচ্ছেন। তার ধান লাগিয়ে কৃষকরা বাম্পার ফলনও পাচ্ছে। মকবুলের তৈরি একটি ধানের মধ্যে দুইটা চাল থাকে। যদি বিআরআরআই এটা নিয়ে গবেষণা করে তাহলে এই এলাকাসহ দেশের মানুষ উপকৃত হবেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ