১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ ইং | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৫৮

ব্যাংক শেয়ারে অনাস্থা, উল্টা রথে পুঁজিবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

তৃতীয় প্রান্তিক শেষে পুঁজিবাজারের ব্যাংকিং খাতের তালিকাভুক্ত ৩০ কোম্পানির মুনাফার উল্লম্ফন দেখা দিলেও নিয়মিত বিক্রয় চাপে কমছে শেয়ার দর। বছরান্তে বার্ষিক মুনাফায় প্রভেশন ঘাটতি, মন্দ ঋণের প্রভাব পড়বে-এমন শঙ্কায় ব্যাংক শেয়ারে বিনিয়োগে নিষ্ক্রিয় অবস্থানে প্রাতিষ্ঠানিক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছর নয় মাস অর্থাৎ তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু ইয়ার ইন্ডে প্রকাশিত চূড়ান্ত প্রতিবেদন হয় নিরীক্ষিত। ফলে আর্থিক প্রতিবেদনে কৃত্রিম মুনাফা দেখানোর সুযোগ কমে আসে।

তারা বলেন, ২০১৭ সালে পুঁজিবাজারের সূচক ও লেনদেনের ব্যাপক উল্লম্ফন হয়েছে। যার নেপথ্যে ব্যাংকিং খাতের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বছরজুড়ে মালিকানা পরিবর্তন, ব্যাংক শেয়ারে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ও মুনাফার ইতিবাচক প্রবণতা থাকায় শেয়ারগুলোও বিগত ৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। কিন্তু সম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক শেয়ারের টানা বিক্রয় চাপে বাজারের সূচক ও লেনদেনে ব্যাপক মন্দা দেখা দিয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) পুঁজিবাজারে ২ লাখ ১৬ হাজার ৯৫৯ কোটি ৭১ লাখ ২৩ হাজার ৮৪৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতের উপর ভিত্তি করে ২২ হাজার ৫৫৪ কোটি ৫ লাখ ৬৬ হাজার ২১১ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ডিএসই’র সর্বমোট লেনদেনের ২২.৬৮ শতাংশ। যা ২০১০ সালের পর সর্বোচ্চ।

২০১০ সালে ব্যাংকিং খাতের উপর ভিত্তি করে ডিএসই’র সর্বমোট লেনদেনের ২৭.৭৬ শতাংশ লেনদেন হয়েছিল। এর পর ২০১১, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ সালে যথাক্রমে ১৫.৬৭ শতাংশ, ১৫.৯৬ শতাংশ, ১৪.৮৯ শতাংশ, ১৬.৫২ শতাংশ, ১৬.৭৭ শতাংশ লেনদেন হয়েছিল।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ব্যাংকিং খাতে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে সিটি ব্যাংকের শেয়ার। এসময় এ কোম্পানিটির উপর ভিত্তি করে ৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ব্র্যাক ব্যাংক, প্রতিষ্ঠানটির ৩ হাজার ২৩৮ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা পুঁজিবাজারের সর্বমোট লেনদেনের ১.৪৯ শতাংশ।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, তৃতীয় প্রান্তিক শেষে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৪ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এসময় ব্যাংকিং খাতের মুনাফার গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৩ শতাংশ। এসময় ব্যাংকিং খাতের ২২টি প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বেড়েছে। মুনাফা কমেছে ৭টির ও লোকসানে ছিল আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ঋণের শ্রেণিমান বিবেচনায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ৪৬ হাজার ৩১২ কোটি টাকার প্রভিশন রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি প্রভিশন করলেও বড় অংকের ঘাটতিতে রয়েছে অনেক ব্যাংক। যার প্রভাব পড়বে বছরের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে।

এদিকে, টানা পাঁচ কার্যদিবস যাবৎ নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। প্রত্যেকদিনই ব্যাংক শেয়ারের ব্যাপক বিক্রয় চাপে ডিএসই’র সূচক কমেছে প্রায় ২০০ পয়েন্ট।

ডিএসই সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে (রোববার) ব্যাংকিং খাতের ৭৬.৬৬ শতাংশ কোম্পানির দর কমেছে। এসময় দর বেড়েছিল ৬.৬৬ শতাংশ। সোমবার বিনিয়োগকারীদের নিস্ক্রিয়তা ডিএসইতে ব্যাংক শেয়ারের ৯৭ শতাংশের দর কমেছে। যার প্রভাব ছিল সূচক ও লেনদেন।

এদিকে, সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিসে (মঙ্গলবার) ডিএসইতে ব্যাংকিং খাতের ৪৬.৬৬ শতাংশ কোম্পানির দর কমেছে। কিন্তু এদিন অপরিবর্তিত ছিল ২৩.৩৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের দর। বুধবার দিনশেষে ব্যাংকিং খাতের ৮০ শতাংশ শেয়ারের দর কমেছে।

এএফসি ক্যাপিট্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব এইচ মজুমদার  বলেন, প্রভিশন ঘাটতি ব্যাংকিং খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট বাড়াতে বাধ্য করেছে। তৃতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর মুনাফা বাড়লেও ইয়ার ইন্ডে মুনাফা কেমন থাকবে তা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা সন্ধিহান।

তিনি বলেন, ব্যাংক, আর্থিক ও বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর ইয়ার ইন্ড হওয়ায় কোম্পানিগুলো অতিদ্রুত তাদের মুনাফা ঘোষণা করবে। তখন বাজারে আবার বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা বাড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলোতে ঋণ খেলাপির সংখ্যা বেড়েছ, পাশাপাশি প্রভিশন ঘাটতি বছর শেষে কোম্পানিগুলোর মুনাফায় নেতিবাচক পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাই বিনিয়োগকারীরা ওয়েট অ্যান্ড সি পলিসি অনুসরণ করছে।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :জানুয়ারি ১১, ২০১৮ ১:২৩ অপরাহ্ণ