নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে। এ জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করছে। যা মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসা সেবা প্রদান নীতিমালা ২০১৭ নামে অভিহিত হবে। এটিই দেশে তাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান সংক্রান্ত প্রথম নীতিমালা। রাজধানী থেকে শুরু করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চিকিৎসা পাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হাসপাতালের ব্যয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বরাদ্দ থেকে পরিশোধ করবে। মুক্তিযোদ্ধার কাছে টাকা থাকুক কিংবা না থাকুক তাকে অবশ্যই চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, জেলা সদর হাসপাতাল, বিভাগীয় শহরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তারা চিকিৎসা সেবা পাবেন। এছাড়া রাজধানীতে ১৫টি বিশেষায়িত হাসপাতালে তারা বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা সেবা পাবেন।
বিশেষায়িত যে সব হাসপাতালে তারা চিকিৎসা সেবা পাবেন সেগুলো হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল, জাতীয় কিডনী ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিওরোসায়েন্সস ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় যে সব হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্ধারণ করবে ওই সব প্রতিষ্ঠান।
নীতিমালা অনুযায়ী পাঁচ কোটি টাকার বেশী সম্পদ প্রদর্শন করে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন এমন অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসা ব্যয়ের ২৫ শতাংশ মওকুফ পাবেন। ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার সম্পদ প্রদর্শন করে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন এমন মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসা ব্যয়ের ৫০ শতাংশ মওকুফ পাবেন। ১২ লাখ টাকা মোট আয় প্রদর্শন করে আয়কর রিটান জমা দিয়েছেন এমন মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসা ব্যয়ের ৫০ শতাংশ অর্থ মওকুফ পাবেন। ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার নিচে নীট সম্পদ প্রদর্শণ করে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসা ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ অর্থ মওকুফ পাবেন। এছাড়া আয়করদাতা হিসেবে নিবন্ধিত নন এমন মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে শতভাগ ফ্রি চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
অসুস্থ ও রোগাক্তান্ত মুক্তিযোদ্ধারা এ চিকিৎসা সেবা পাবেন। চিকিৎসা সেবা বলতে সকল প্রকার ডাক্তারী সেবা, শৈল্য চিকিৎসা, ঔষধ ক্রয় ও সরবরাহ, বেডভাড়া, খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ এবং সেবিকার সেবা চিকিৎসা সেবার অন্তর্ভূক্ত থাকবে। তবে মেডিকেল এ্যাটেনডেন্টের বেড ভাড়া, খাদ্য ও পানীয়সহ অন্যান্য ব্যয় মুক্তিযোদ্ধাকে অ্যাম্বুলেন্স বা অন্যান্য যানবাহণ কিংবা পরিবহণ সেবা প্রদান করেলে তার অর্থ তাকে পরিশোধ করতে হবে। ৫ বছর যে এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যে স্থান থেকে ভাতা তুলেছেন ওই ঠিকানায় প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হবে। জরুরী চিকিৎসা সেবা একজন মুক্তিযোদ্ধা যে কোন স্থান থেকেই গ্রহণ করতে পারবেন।
নিজ উপজেলা থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ শুরু হবে। জরুরী প্রয়োজনে উপজেলার বাইরে থেকেও সেবা গ্রহণ করা যাবে। উপজেলায় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সীমাবদ্ধতা থাকলে রোগের বিবরণসহ রোগীকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠাতে হবে। একই ভাবে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার সীমাবদ্ধতা থাকলে রোগের বিবরণ দিয়ে রোগীকে বিভাগীয় শহরের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠাতে হবে। বিভাগীয় পর্যায়ে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না হলে তাকে ঢাকায় বিশেষায়িত হাসপাতালে রোফার করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধার প্রমাণসহ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় এ সুবিধা পাবেন না। ভর্তি অবস্থায় রোগীর সকল প্রকার ওষুধ সরবরাহের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। কোন ধরণের গাফলতি চলবে না। একটি হাসপাতালে একাধারে একজন মুক্তিযোদ্ধা ৬০ দিন চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
চিকিৎসা ব্যয় মওকূফের ক্ষেত্রে আয়কর পরিশোধ সংক্রান্ত কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে। আয়কর পরিশোধের প্রমান দিতে ব্যর্থ হলে মুক্তিযোদ্ধার জাতীয় পরিচয়পত্র,স্মার্টকার্ড সংরক্ষণ করতে হবে। প্রয়োজনে ১৫০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্টাস্পের আয়কর প্রদান করেন না এমন ঘোষণা প্রদান করতে হবে। পরবর্তীতে তার বর্ণনা সঠিক হলে তিনি সম্পূর্ণ চিকিৎসা ব্যয় মওকুফ পাবেন। আর যদি প্রমাণ হয় যে তিনি আয়কর পরিশোধ করছেন তা হলে তার মাসিক ভাতা থেকে চিকিৎসা ব্যয়ের অর্থ সমন্বয় করে কেটে রাখা হবে। চিকিৎসা ব্যয়ের টাকা প্রতিটি হাসপাতালকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিশোধ করবে। বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় হয়ে গেলে পুনরায় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। আর যে সব হাসপাতাল বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারবে না তা অর্থ বছর শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ফেরত দিতে হবে। কোন সংকট দেখিয়ে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত করা যাবে না। অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সঠিক ভাবে হচেছ কি না তা মন্ত্রণালয় থেকে এবং স্থানীয়ভাবে তদারকির ব্যবস্থা থাকবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ