নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুই দেশ থেকে চাল আমদানিতে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা শিথিলের মেয়াদ শেষ হওয়ায় চালের দাম আবার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ, ব্যবসায়ীরা এই বিষয়টি ব্যবহার করে বাড়তি মুনাফার সুযোগ নিতে পারেন। ব্যবসায়ীরা জানান, পাটের ব্যাগে চাল আমদানির বাধ্যবাধকতা থাকলে খরচ বেশি পড়ে। এই সুবিধা না থাকলে এই বাড়তি খরচটা চাল বিক্রি করেই তুলে নিতে হবে।
বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে। কারণ, ব্যবসায়ীরা সুযোগসন্ধানী, এই বিষয়টি তারা বেশ ভালো করেই জানেন। ফলে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের শর্ত শিথিলের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে। তবে এ ক্ষেত্রে আবার একমত নন পাট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, চাল ব্যবসায়ীরা যে কথা বলে এই সুবিধা আদায় করেছিলেন, সে কথা রাখেননি তারা। চালে ঠিকই বাড়তি মুনাফা করছেন। অথচ এতে পাট খাতের ক্ষতি হচ্ছে।
চালের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পর ব্যবসায়ীদের আবেদনে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে খাদ্য আমদানিতে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের নিয়ম শিথিল করে সরকার। এই বিশেষ সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩১ ডিসেম্বর। ফলে পাটের ব্যাগ ব্যবহার নিশ্চিতে এখন ফের অভিযানে নামছে সরকার। যদিও খাদ্য মন্ত্রণালয় চাইছে শিথিলের মেয়াদ আরও কয়েক মাস বাড়ানো হোক।
তবে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় শিথিলের মেয়াদ আর বাড়াতে চায় না। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ব্যবসায়ীরা ভুল বার্তা দিয়ে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারে তাদের কারখানা চালুর চেষ্টা করছে। তাই এখন থেকে পাটের ব্যাগ ব্যবহার নিশ্চিত ও পলিথিনের বিরুদ্ধে আবার অভিযানে নামতে চায় তারা।
জানতে চাইলে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ঠুনকো অজুহাতে পাটের ব্যাগ ব্যবহার শিথিলের অভিযোগ করেছেন। এটা তো বন্ধ ছিল। চালের দাম কি কমেছে?’ সচিব বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বর টাইম ফ্রেম শেষ। এখন আবার অভিযান চলবে। আমরা শুধু ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানির ক্ষেত্রে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের শর্ত শিথিল করেছিলাম। কারণ ওই দেশ দুইটিতে পাটের ব্যাগ উৎপাদন হয় না। আর বাকি ক্ষেত্রে আমাদের শর্ত বহাল ছিল।’
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় চাইছে বিদেশ থেকে চাল আমদানিরে জন্য পাটের ব্যাগের শর্ত শিথিলের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হোক। যাতে আগামী বোরো মৌসুম পর্যন্ত এটি বহাল থাকে। জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বদরুল হাসান বলেন, ‘আমরা পাটের ব্যাগ ব্যবহারের শর্ত আরও ছয় মাস শিথিলের জন্য পাট মন্ত্রণালয় প্রস্তাব পাঠাব।’ এ বিষয়ে পাটসচিব বলেন, ‘এ রকম কোনো প্রস্তাব আমাদের কাছে আসেনি। আসলে সেটি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত করা হবে।’
এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছিলেন, ‘অনেক চাল মিল মালিকের প্লাস্টিকের (পিপি) ব্যাগ তৈরির কারখানা রয়েছে। চটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় সেসব কারখানা প্রায় বন্ধ হওয়ার সম্মুখীন। তাই অসাধু চাল ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীদের ভুল বুঝিয়ে ওই কারখানাগুলো আবার চালু করতে চাইছে।’
‘চটের ব্যাগ ব্যবহার না করলে চালের দাম প্রতি কেজিতে ১/২ টাকা কমবে বলে ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীদের বুঝিয়েছেন। কিন্তু এটা ডাহা মিথ্যা কথা। চটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারে চালের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা কমতে পারে। কারণ, আমরা একটি চটের বস্তা বিক্রি করি ৪৪ টাকায়, যা খালি অবস্থায় ২০ টাকা বিক্রি করা যায়। ফলে চটের বস্তায় খরচ হয় ২৪ টাকা। আর একটি প্লাস্টিকের বস্তায় খরচ হয় ২৫ টাকা। সুতরাং প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা কীভাবে চালের দাম কমাবেন?’ পাটের ব্যাগ ব্যবহারে বাধ্য করতে ২০১০ সালে আইন প্রণয়ন করে সরকার। ওই আইনে কিছুটা সংশোধন আনা হয় ২০১৩ সালে।
পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ (সংশোধিত)-এর ১৪ ও ১৫ ধারার বিধান অনুযায়ী, ‘কোনো ব্যক্তি এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধি দ্বারা নির্ধারিত পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার না করে কৃত্রিম মোড়ক দিয়ে কোনো পণ্য বা পণ্যসামগ্রী মোড়ক, বিক্রি, বিতরণ বা সরবরাহ করলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর এই অপরাধ যদি কেউ আবার করে, তাহলে যে দণ্ড আছে তার দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ