২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং | ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:০৫

বিদ্যুতের দাম কমানো না হলে আদালতে যাবে ক্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আদেশ বাতিল কিংবা দাম কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) প্রতি দাবি জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। তা না হলে ওই আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করবে সংগঠনটি।
গতকাল রবিবার রাজধানীতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ক্যাব এ দাবি জানায়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি করে বিইআরসি এবং ২৩ নভেম্বর বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। গত ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন মূল্যহার কার্যকর হয়। গতকাল ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়ায় গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবটি ন্যায্য ও যৌক্তিক হতে হয়। তা না হলে অথবা ভোক্তার জন্য মূল্যহার বৃদ্ধি অসহনীয় হলে মূল্যহার অপরিবর্তিত রাখার আদেশ হতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকারকে ঘাটতি পূরণে ভর্তুকি বা অনুদান দিতে হয়। এ অনুদানের জন্য বিইআরসি থেকে প্রস্তাবও করা হয়নি। এমনকি  বিদ্যুৎ খাতের ঘাটতি পূরণে সরকার অনুদান দেয় না, ঋণ দেয়। ঋণের বোঝা ভোক্তাদের ওপরই থাকে। সেটি সুদসহ বেড়েই চলেছে। অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধির দায় ভোক্তারা নেবেন না। শুনানিতে প্রমাণিত হয়েছে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নয় বরং কমানো প্রয়োজন।
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে। এটি ভোক্তা স্বার্থবিরোধী। দামবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য-হিসাব উপেক্ষা করা হয়েছে। বিইআরসি গঠিত হয়েছে ভোক্তা ও উত্পাদকের স্বার্থ রক্ষার জন্য। কিন্তু এখন তারা ভোক্তার স্বার্থ দেখছে না। ৮-১০ দিনের মধ্যে দাম কমানো না হলে অইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে বিইআরসির চেয়ারম্যান ও সাবেক বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, মূল্যবৃদ্ধির সমন্বয়ে বিদ্যুতের দাম শুধু বাড়েনি, কমেছেও। ৩০ লাখ গ্রাহকের জন্য বিদ্যুতের দাম কমেছে এবং ৭০ লাখ গ্রাহকের জন্য দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সব নিয়ম মেনে মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। এরপরও ক্যাব বা অন্য কেউ আদালতে গেলে আমরা আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেব।  ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ব্যয় বৃদ্ধির বিবরণ দিয়ে ক্যাবের উপদেষ্টা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন,  বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতার অসম ব্যবহারে ৩ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা, জ্বালানির দরপতন অসমন্বয়ে ২ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা, ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি পেমেন্টে ১ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা, পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যহার ঘাটতিতে ৩৩৩ কোটি টাকা, সেচ ও প্রান্তিক আবাসিক গ্রাহকদের নিকট লোকসানে বিদ্যুৎ বিক্রিতে ৩ হাজার ৪৬ কোটি টাকা, বিতরণের জনবল ও অবকাঠামোতে ১ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা অযৌক্তিকভাবে খরচ করা হয়েছে। মোট অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধি ১৩ হাজার ২২ কোটি টাকা। তিনি বলেন, ভুলনীতি ও দুর্নীতির কারণে হওয়া এই ব্যয়বৃদ্ধির পুরোটাই বহন করে ভোক্তারা।
সাংবাদিক সম্মেলনে মূল্যবৃদ্ধির আদেশ বাতিল, ক্যাবের ১৫ দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন, বিদ্যুৎ উত্পাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানির চেয়ারম্যান ও বোর্ড সদস্য পদ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক ও বর্তমান সকল কর্মকর্তাকে অবমুক্ত করা এবং বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি অনুসন্ধানে ভোক্তা প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন ও অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি
প্রকাশ :জানুয়ারি ৮, ২০১৮ ১২:৩৭ অপরাহ্ণ