২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:০৪

১৩০টি রোহিঙ্গা পরিবারকে একাই আশ্রয় দিয়েছেন মফিজউদ্দীন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের ওপরে তীব্র চাপ পড়ছে। অনেকের অভিযোগ রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের কর্মক্ষেত্রের ওপরে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। রোহিঙ্গাদের সংকটের করণে কক্সবাজারের বাংলাদেশিদের ওপরে বিরুপ প্রভাব পড়লেও অনেকেই রোহিঙ্গাদের প্রতি দেখাচ্ছেন সহানুভূতি।রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী সে রকম একটি পরিবার মফিজউদ্দীনের। তিনি গত চার মাস ধরে ১৩০টি রোহিঙ্গা পরিবারকে তার ভিটেয় আশ্রয় দিয়ে আসছেন।

মফিজউদ্দীনের বাড়ি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছেই। স্থানীয় একটি দোকানে সবজি বিক্রি করে জীবিকা চলে তার। তবে তার পৈত্রিক বাড়িটি বেশ বড় আকারের। সেখানেই তিনি আশ্রয় দিয়েছেন ১৩০টি রোহিঙ্গা পরিবারকে। সেখানে বাঁশ ও প্লাষ্টিকের সাহায্যে তারা ঘর তুলেছেন। মফিজউদ্দীনদের মতে রোহিঙ্গারা তাদের জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিতে এসেছে বাংলাদেশে। তাদের অসহায়ত্ব আর কান্নাকাটি করে মফিজউদ্দীনের কাছে আশ্রয় চায়। মফিজউদ্দীন রোহিঙ্গাদের না চেনা সত্তেও মুসলিম হিসেবে তাদের প্রতি এক ধরনের মমত্ববোধ থেকেই তিনি তাদের আশ্রয় দেন। একটি মাত্র বিশুদ্ধ খাবার পানির টিউবয়েল রয়েছে যা ১৩০টি রোহিঙ্গা পরিবার ও বাংলাদেশি নাগরিক সবাই মিলেমিশে তা ব্যবহার করছেন।

মফিজউদ্দীনের জায়গায় আশ্রয় নেয়া মোঃ আলম নামের একজন রোহিঙ্গা। তার ঘরে কোন ধরণের আসবাব পত্র নেই। এই জায়গায় আশ্রয় নিয়ে আলম আপাতত স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছেন। মোঃ আলম বলেছেন, তিনি প্রথমে আশ্রয় নেন পুরনো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। অনেকের কাছে শুনে মফিজউদ্দীনের কাছে এসে অনুরোধ করে একটি ঘর তোলেন।

উখিয়া এবং কুতুপালংয়ে প্রায় বর্তমানে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা এমএসএফ বলেছে, মিয়ামারে গত আগস্ট মাসের পর থেকে অন্তত ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। জীবন বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে এরই মধ্যে একটি দলিলও সাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া হাসিনা নামের একজন বলেছেন, আমরা জানি না এ দেশে কত দিন থাকব, ৫ বছর ১ বছর বা ২ বছর কত দিন থাকবো। তবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হিসেবে আমাদের স্বীকৃতি আর নিজেদের জায়গা জমি ফিরিয়ে দিলে, তবেই তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছেই একটি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থার সাহায্যে স্কুলে পড়াশুনা করছে রোহিঙ্গাদের শিশু। সেখানে তারা মিয়ানমারের বর্ণমালা শিখছে। বিশ্ব খাদ্য সহায়তায় চলছে রোহিঙ্গাদের পরিবার। আর মফিজউদ্দীন জানালেন, তাদের অসুবিধা হলেও তিনি রোহিঙ্গাদে ফেরত দিনে চান না।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দিতে বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু মফিজউদ্দীন বলছেন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দিয়ে তার কোনো উপায়ও ছিল না। কারণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাথে তার বাড়ি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। তারা খালি হাতে এসে কান্নাকাটি করছিল। একটু আশ্রয় চাইলে তাদের থাকতে দেই। না দিয়ে কিছুই করার ছিল না। মুসলমান হিসেবে আরেকজন মুসলমানকে এ অবস্থায় দেখে চুপ করে থাকতে পারিনি। তাদের ভাগ্যে যদি নিজদেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ হয় যাবে, নইলে এখানেই থাকবে, কি আর করা। বিবিসি বাংলা

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :জানুয়ারি ৬, ২০১৮ ২:৪৭ অপরাহ্ণ