নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাজীপুরের কালীগঞ্জে সুজন সরকার নামের এক জুতার দোকানি হঠাৎই বনে গেছেন ডাক্তার। তার নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা ডিগ্রী। তবু তিনি কালীগঞ্জ পৌরসভার বাজার এলাকার কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে ‘সরকার’ নামের একটি ফার্মেসিতে চেম্বার খুলে রমরমা চিকিৎসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনিই এখানকার একমাত্র চিকিৎসক, যার কাছে সকল রোগের চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়। স্থানীয় প্রশাসনের চোখে ধুলা দিতে তার চেম্বারটি খুব বেশি সুসজ্জিত বা আকর্ষণীয় করেননি। এমনকি কোনো প্যাড ও ভিজিটিং কার্ডও ব্যবহার করেন না তিনি। ফার্মেসির দু’টি সাটারের আবার একটি রাখেন বন্ধ। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া চিকিৎসা দিয়ে নিজের দোকান থেকেই ওষুধ কিনতে বাধ্য করেন রোগীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছর দশেক আগে সুজনের বর্তমান ফার্মেসির চেম্বারের পিছনের অংশে তার বাবা ইদ্রিস সরকার ডাক্তারি করতেন। আর সুজন সেই সময় সামনের অংশে করতেন জুতার ব্যবসা। কিন্তু তার বাবার মৃত্যুর পর রাতারাতি পাল্টে যায় দৃশ্যপট। বাবার করা ডাক্তারি উত্তরাধীকার সূত্রে পেয়ে যান সুজন সরকার। আর এভাবেই একজন জুতার দোকানি বনে যান মস্তবড় ডাক্তার। তবে তার এই ডাক্তার হওয়ার পিছনে স্থানীয়ভাবে কাজ করছে তারই মত মস্তবড় একটি দালাল চক্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুজন সরকারের এক আত্মীয় বলেন, সুজন তেমন পড়াশুনা করেনি। এমনকি স্কুলের গণ্ডিও পেরোতে পারেনি। কিন্তু কালীগঞ্জ বাজারে এসে ফার্মেসি ব্যবসা ও ডাক্তারি শুরু করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সুজন সরকার নিজেই তার চেম্বারে আসা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। প্রতিটি রোগীর কাছ থেকে রোগ বুঝে ভিন্নহারে ফি নিচ্ছেন। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও চতুর সুজন কোন চিকিৎসাপত্র না দিয়ে নিজের ফার্সেমি থেকে সরাসরি ওষুধ দিয়ে ওষুধের গায়ের নিয়মাবলী লিখে দেন রোগীদের।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সরকার ফার্মেসিতে আসা বেশিরভাগ রোগীই দরিদ্র। এ কারণেই তাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে ওই ভুয়া চিকিৎসক ভুল সেবা দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এ বিষয়ে সুজন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার বাবা এই সরকার ফার্মেসির মালিক ছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর হাত বদল করে তিনিই দীর্ঘ দিন ধরে সেই চিকিৎসা করছেন। তার অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাদেকুর রহমান আকন্দ বলেন, সরকার ফার্মেসির বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শুনেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ