নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই পোশাক শ্রমিকরা নতুন মজুরি কাঠামোতে বেতন পেতে যাচ্ছেন। আর এ জন্য রবিবারের মধ্যেই নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের চেষ্টা চলছে। সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু। জানিয়েছেন, তার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে।
পোশাক খাতে এখন পযন্ত যতবার বেতন বেড়েছে, তার আগে প্রতিবারই আন্দোলন করতে হয়েছে শ্রমিকদের। শ্রমিক আন্দোলনে যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, তখনই গঠন করা হয়েছে মজুরি বোর্ড, বাড়ানো হয়েছে বেতন। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন।
সরকারি চাকুরেদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ করার পর বেতন বাড়ানোর দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের একটি অংশ ২০১৬ সালের শেষ দিকে আন্দোলন শুরু করলেও সেটি আগের মতো জোরাল ছিল না।
এর দুই বছর আগে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নতুন মজুরি কাঠামোয় প্রথম বেতন পেয়েছিলেন শ্রমিকরা। এর আগের মাকে কার্যকর হওয়া এই মজুরি বোর্ডে প্রতি বছর পাঁচ শতাংশ হারে বেতন বাড়ার পাশাপাশি পাঁচ বছর পর নতুন বেতন কাঠামো করার কথা বলা ছিল।
এই হিসাবে নতুন মজুরি কাঠামো চালু হতে আরও এক বছর সময় বাকি আছে। তবে সরকারের শেষ বছরে এই বিষয়টি নিয়ে যেন কোনো পক্ষ অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে, সে জন্য সরকার আগেভাগেই উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগের পর গত নভেম্বরের শেষ দিকে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে সরকারকে সম্মতি জানায় পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। আর এরপরই শ্রম মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আশা করছি আগামী রবিবারের মধ্যে মজুরি বোর্ড গঠন করব। এরপর বোর্ড বেতন বাড়ানোর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম হাতে নেবে।’
এই বোর্ডে কে কে থাকবেন এবং কী হারে বেতন বাড়বে-এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পোশাক মালিকদের একজন প্রতিনিধি এবং শ্রমিকদের একজন প্রতিনিধি এবং সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে এই মজুরি বোর্ড গঠন হবে।’
‘মজুরি বোর্ড হোম ওয়ার্ক করে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেবে ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী কেমন বেতন বাড়ানো যায়। এরপর সরকার ঠিক করবে বেতন কত বাড়ানো হবে।’
২০১৮ সালই বর্তমান সরকারের শেষ বছর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই বছরেই পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার পেছনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক আছে কি না- এমন প্রশ্নে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা এই উদ্যোগ নেইনি। ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পর পর মজুরি পুনর্নির্ধারণ করতে হয়।’
‘আমরা সর্বশেষ পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়েছি চার বছর পার হয়েছে। সে হিসেবে এখনও একবছর বাকি থাকলেও মজুরি বোর্ড ছয়মাস এটা নিয়ে কাজ করবে। তারপর এটা চূড়ান্ত করা হবে। তাও আগামী ডিসেম্বর লেগে যাবে।’
গতবার বেতন বেড়েছিল ৮০ শতাংশ
২০০৮ সালে প্রথম মজুরি বোর্ডের আওতায় আসেন পোশাক শ্রমিকরা। তখন ন্যূনতম মজুরি ছিল তিন হাজার টাকা। আর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কার্যকর হওয়া মজুরি কাঠামোয় অনুযায়ী বেতন ন্যূনতম মজুরি ৮০ শতাংশেরও বেশি বাড়িয়ে করা হয় ৫৫০০ টাকা। তবে সে সময় শ্রমিক সংগঠনগুলো দাবি তুলেছিল এটা আট হাজার টাকা করার। আর মালিকটপক্ষ পাঁচ হাজার টাকার নিচে রাখতে চেয়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে এটি ৫৩০০ টাকা মেনে নেয় তারা।
ওই মজুরিকাঠামোয় মোট চারটি গ্রেড ছিল। প্রতিটি গ্রেড শ্রমিকরা মূল মজুরির সঙ্গে অন্যান্য গ্রেডের মত বাসা ভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত ও খাদ্য ভর্তুকি ভাতা পাবেন বলেও বলা ছিল তাতে।
এছাড়া প্রতি কর্মদিবস ২৫ টাকা হারে ২৬ দিনের খাদ্য ভর্তুকি বাবদ তখন ৬৫০ টাকা ধরা হয়।
শ্রমিক নেতারা আশা করছেন, গতবার যে হারে বেতন বেড়েছিল এবার তার চেয়ে বেশি হারে, আর না হলেও যেন সে হারে অর্থাৎ প্রায় ৮০ শতাংশ বেতন বাড়বে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘এটা একটা ভালো উদ্যোগ। মজুরি বোর্ড গঠন হলে আমরা ভাল একটা প্রস্তাব দেবো যাতে উপযুক্ত মজুরি পায় শ্রমিকরা।’
শ্রমিক নেতারা বলেন, সরকারি চাকুরেদের বেতন প্রায় শতভাগ বাড়িয়েছে সরকার। এটিকেই ক্ষেত্রে বেতন বাড়ানোর একটি আদর্শ নমুনা হিসেবে দেখতে চান তারা। আবার ২০১৪ সালের তুলনায় জীবনযাত্রার ব্যয় যত বেড়েছে, সেই হিসাব করেই প্রস্তাব দেয়ার কথা জানান শ্রমিক নেতারা।
তবে পোশাক মালিকরা বেতন কত বাড়াতে চান, সেই বিষয়টা এখনও জানাতে রাজি হচ্ছেন না। তারা শ্রমিক সংগঠনের দাবি এবং সরকারের অবস্থান দেখেই সিদ্ধান্ত নিতে চান। আর সরকারও এ বিষয়ে আগেভাগে কিছু জানাতে চায় না বলে জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ