নিজস্ব প্রতিবেদক:
ব্যাংকিং খাতে মালিকানা পরিবর্তন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অপসারণে আতঙ্কিত ব্যাংকাররা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছেন তারা। অন্যদিকে, আগ্রাসী ঋণের ব্যাপারে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বুধবার ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে বৈঠকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এমডিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ব্যাংকার্স বৈঠকে সামগ্রিক ব্যাংকিং খাত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকাররা ব্যাংকিং খাতে মালিকানা পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেছেন। এখানে অনিময় করে কিছু হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা দেখবে। এর বাইরে দেখার সুযোগ নেই। আর অনিময় করে কোনো প্রধান নির্বাহী পার পাবেন না বলেও তাদের সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
আগ্রাসী ঋণের বিষয়ে তিনি বলেছেন, ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী ঋণের বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর আমানত থেকে ঋণের পরিমাণ যাতে নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকে সেটি খেয়ার রাখতে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, শিগগিরই ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণ সীমা হালনাগাদ করে তা কমিয়ে আনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ইসলামি ব্যাংকগুলো তার আমানতের ৯০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে। সেটি পুনঃনির্ধারণ করে ৮৮ শতাংশ করা হতে পারে। আর কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো তার আমানতের ৮৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে। এ হার নামিয়ে ৮০-৮১ শতাংশ করা হতে পারে।
এদিকে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিদায়ী বছরে ব্যাংকিং খাতে হঠাৎ বেশ কিছু পরিবর্তন আমরা দেখেছি। এতে আমরা উদ্বিগ্ন। আমানতকারীরাও আতঙ্কে রয়েছেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি আমরা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যাংকারদের নানাভাবে হয়রানি করছে বলে ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তারা গভর্নরকে জানিয়েছেন, নিরাপদ অনেক ব্যাংকারকে অহেতুক হয়রানির তথ্যও পাওয় যায়। ব্যাংকারদের সুরক্ষা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, ঘোষিত মুদ্রানীতি ছাড়িয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ১৯ শতাংশ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বেড়েছে। এটি দরকার নেই। সরকারের ঘোষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ হলেও যথেষ্ট। তাই ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগকে কিছুটা লামাম দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, কিছু ব্যাংক তার স্বীকৃত বিল পরিশোধে গড়িসমি করে। এ সম্পর্কে বেশকিছু বিদেশি ব্যাংক সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছে। ব্যাংকগুলো এ ব্যাপরে হুশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। স্বীকৃত বিল পরিশোধে কোনো ধরনের গড়িমসি করা যাবে না। এটি দেশের ভাবমূর্তির বিষয়। একই সঙ্গে বৈদের্শিক মুদ্রা বাজার পরিস্থিতি যাতে অস্থিতিশীল না হয়, সেদিকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। অস্বাভাবিক আমদানি এবং গুণগত পণ্য আমদানি হচ্ছে কি-না সেটি প্রয়োজনে যাচাই করতে বলা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় আমদানি যাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে চাপ না ফেলে সেটি মনে রাখতে হবে।
বৈঠকে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ব্যাংকাররা আইনি জটিলতাকে বাধা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন থাকলেও খুব বেশি ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে এমডিরা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কোনো পথ বের করা যায় কিনা তার আশ্বাস দিয়েছেন। ব্যাংকিং খাতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীদের নিকট থেকে ফি আদায় করার দাবি করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই প্রস্তাব নাকোচ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, এতে মেধাবী ও দরিদ্ররা আবেদন করা থেকে বঞ্চিত হবেন।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ