৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:২১

অগ্রহায়ণের বৃষ্টিতে ফলন কমেছে আমনের

রাজশাহী প্রতিনিধি:

আমনের উঠতি মৌসুমে বৃষ্টির কারণে রাজশাহী অঞ্চলে এবার ধানের ফলন কমে গেছে। সেই সঙ্গে কমেছে খড়ের উৎপাদনও। ধান কাটা-মাড়াইয়ের পর কৃষকরা বলছেন, অসময়ের বৃষ্টিতে ধানের উৎপাদন কমেছে বিঘায় অন্তত দুই মণ কমেছে। তাই নতুন ধান ওঠার পরও দাম কমার লক্ষণ নেই। কৃষকরা জানিয়েছেন, এবার রোপা আমনের চারা রোপনের পরই দেখা দেয় বন্যা। এতে নষ্ট হয় অনেক ফসলের ক্ষেত। বন্যা শেষে সে জমিতেই ফের রোপন করা হয় চারা। কৃষকরা ফলালেন সোনার ফসল। কিন্তু তারা যখন সোনার ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই শুরু হয় বৃষ্টি। দুর্যোগপূর্ণ ওই আবহাওয়া কারণেই কমে গেছে ফলন।

কৃষকরা বলছেন, বৃষ্টিতে শীষ ঝরে ধানের ফলন কমলেও বাজারে রয়েছে ভাল দাম। তাই যারা নিজের জমিতে চাষাবাদ করেছিলেন তাদের লোকসান হচ্ছে না। কিন্তু যারা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন তারা পড়েছেন লোকসানের মুখে। জেলার তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা গ্রামের কৃষক সেলিম রেজা জানান, অগ্রহায়ণের শেষের দিকে তিনি জমির ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু তখনই তিন দিন ধরে শুরু হয় বৃষ্টি এবং বাতাস। এতে তার জমির পাকা ধানের গাছ নুইয়ে পড়ে। কয়েকদিন আগে ধান কেটে ফলন পেয়েছেন বিঘায় ১৪ মণ। অথচ আগের বছরই তিনি ওই জমি থেকে ফলন পেয়েছিলেন বিঘাপ্রতি সাড়ে ১৬ মণ।

গোদাগাড়ীর বিজয়নগর গ্রামের কৃষক আফসার আলী জানান, বিঘাপ্রতি চার মণ ধান দেয়ার চুক্তিতে তিনি দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। ধান কাটার আগ মুহুর্তে বৃষ্টি আর বাতাসে তারও জমির ধান পড়ে যায়। ফলন কম হবে দেখে শ্রমিকরা এই ধান কাটতে চাইছিলেন না। পরে বিঘাপ্রতি তিন মণ ধান দেয়ার চুক্তিতে শ্রমিকদের দিয়ে ধান কাটিয়েছেন। তিনি জানান, তার এক বিঘা জমিতে মোট ফলন হয়েছে ১৩ মণ। এর মধ্যে চার মণ দিয়েছেন জমির মালিককে। আর তিন মণ দিয়েছেন শ্রমিকদের। বাকি ছয় মণ ধান তিনি পেয়েছেন। প্রতি মণ এক হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছেন ছয় হাজার ৬০০ টাকা। অথচ প্রতি বিঘা ধান চাষে তার খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা।

পবা উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামের ধানচাষি আকবর হোসেন বলেন, অগ্রহায়ণের বৃষ্টিতে এবার অধিকাংশ কৃষকের জমির ধানের ফলন কমে গেছে। বাতাসে ধান গাছ পড়ে যাওয়ায় কমে গেছে খড়ের উৎপাদনও। তাই এবার খড়ের দামও চড়া। এক হাজার আঁটি খড় এখন বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকায়। ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে খড়ের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন কৃষকরা। একই উপজেলার হরিপুর গ্রামের কৃষক সারবান আলী বলেন, অগ্রহায়ণ মাসে সাধারণত আকাশে থাকে ঝলমলে রোদ। এই মাসেই কৃষকরা মাতেন নবান্ন উৎসবে। কিন্তু এবার অগ্রহায়নে বৃষ্টি। এতেই ঘটেছে কৃষকদের সর্বনাশ। প্রায় সব জমিতেই কমেছে ধানের ফলন। দাম ভালো থাকায় ধান বেচে কোনো রকমে উৎপাদন খরচ তুলছেন কৃষকরা।

অগ্রহায়ণের বৃষ্টিতে ধানের ফলন কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালি। তিনি বলেন, যেসব জমিতে ১৬ মণ ধান হওয়ার কথা ছিল, বৃষ্টিতে ধান ঝরে যাওয়ায় সেসব জমিতে ফলন হচ্ছে ১৪ মণ। তবে বাজারে ভাল দাম থাকায় কৃষকরা খুব বেশি লোকসানের মুখে পড়েননি। ধানের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহে রোপা-আমনের কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে। এরপর থেকেই কৃষকরা ধান বিক্রি করছেন। এখন প্রতিমণ গুটি স্বর্ণা জাতের ধান কেনা হচ্ছে ৯৯০ থেকে এক হাজার টাকায়। আর স্বর্ণা ধান কেনা হচ্ছে এক হাজার ৩০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকায়। এছাড়া আরও উন্নতজাতের ধানগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিমণে এক হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পাচ্ছেন চাষিরা।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় এবার স্বর্ণা, গুটি স্বর্ণা, বিনা-৭ এবং ব্রি ধান-৩৪, ৩৯, ৪৯ ও মিনিকেটসহ প্রায় ৩০টি জাতের ধান চাষ হয়েছিল। ধান চাষের লক্ষমাত্রা ছিল ৭০ হাজার হেক্টর। তবে চাষ হয়েছিল ৭৩ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে রোপনের পরই বন্যা ভেসে গেছে দুই হাজার হেক্টর জমির ধান গাছের চারা। বাকি জমিগুলোতে গড়ে ১৫ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি 

প্রকাশ :ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭ ১২:৪৬ অপরাহ্ণ