নিজস্ব প্রতিবেদক:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য ইচ্ছুকদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে ইতিমধ্যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আবেদন করার সময় শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। নতুন দলের নিবন্ধনের আবেদন করার আর মাত্র সাত দিন সময় থাকলেও তেমন সাড়া পাচ্ছে না কমিশন। এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি নতুন দল নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এবার যথাযথভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে শর্ত পূরণ হলেই কেবল নতুন দলের নিবন্ধন দেয়া হবে। খতিয়ে দেখা হবে তাদের মাঠপর্যায়ের অফিসসহ সকল বিষয়। ‘এক নেতা, এক দল’- এমন কোনো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়া হবে না বলে ইতিমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদনের বিষয়ে ইসির সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম জানান, ‘আমাদের কাছে নতুন দলের নিবন্ধন চেয়ে কয়েকটি আবেদন এসেছে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন পাওয়ার পর কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আবেদন যাচাই-বাছাই, দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে মার্চের মধ্যে নতুনদের নিবন্ধন চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে যাতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারাও অংশ নিতে পারে।’
আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার আগে কেউ আবেদন করে থাকলে তা গ্রহণ করা হবে না। তাদেরকে পুনরায় নতুন কমিশনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে বলেও জানান তিনি।
নতুন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, তিনটির মধ্যে একটি শর্ত পূরণ হলেই তারা নিবন্ধনের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। শর্তগুলো হলো-
১. দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেকোনো জাতীয় নির্বাচনের আগ্রহী দলটির যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন।
২. যেকোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেওয়া আসনগুলোয় মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পায়, এবং
৩. দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকে।
এছাড়া ইসি কর্মকর্তারা জানান, তারা দলগুলোর সব ধরনের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী কোটার বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। নিবন্ধন শর্ত অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে প্রত্যেক দলকে এই কোটা পূরণ করতে হবে।
অবশ্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কয়েকটি দল তাদের কমিটিতে ১৫ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রয়েছে বলে কমিশনকে অবহিত করেছে। আর ২০২০ সালের মধ্যে কোটা পূরণের প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছে।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর রাশ টেনে ধরছে কমিশন। এক নেতার এক দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে যাবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। মাঠ পর্যায়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) শর্ত দলগুলো পূরণ করছে কিনা তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
মূলত নিবন্ধিত দলগুলোর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যে সংখ্যক অফিস থাকার কথা, সেগুলো আদৌ আছে কিনা তার খোঁজ করতে মাঠে নামবে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা। আর এতে অনেক দল নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়তে পারে, এমনকি নিবন্ধনও হারাতে পারে তারা। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইসি সূত্র জানায়, এর আগে দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগ্রহী নতুন ৪৩টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ৪১টিই দলই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিজেদের ‘যোগ্যতার’ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়।
মাত্র দুটি দল শর্ত অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কার্যালয় ও কমিটি থাকার তথ্য দিয়েছিল। এরপর তাদের নিবন্ধন দেয় কমিশন। দল দুটি হলো- বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।
সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালুর পর এ পর্যন্ত ৪২টি দল নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। আর আদালতের আদেশে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ হয়।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ