সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
ছয় মাস পর নিজ বাড়িতে ফিরলো রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামনি। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাতক্ষীরা জেলার সদর উপজেলার দক্ষিণ কামার বায়েশা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় মুক্তামনির বহনকৃত অ্যাম্বুলেন্সটি। এর আগে সকাল ৭টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি রওয়ানা দেয়। মুক্তামনির সঙ্গে ছিলেন তার বাবা ইব্রাহীম হোসেন, মা আসমা খাতুন এবং ছোট ভাই আল আমিন।
মুক্তামনির বাড়ি ফেরার খরব পেয়ে আগে থেকে অনেক আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীরা অপেক্ষায় ছিল। মিডিয়া কর্মীদের উপস্থিতিও কম ছিল না। বাড়ি পৌঁছানের সাথে সাথে সেখানে কয়েকশ মানুষ জড়ো হয়ে যায় মুক্তমনিকে এক নজর দেখার জন্য। মুক্তামনির বাবা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, শুক্রবার সকাল ৭টায় সাতক্ষীরার উদ্দেশে রওনা করে পৌঁছালাম সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পরে। সাতক্ষীরায় পৌঁছাতে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। ফেরি পার হওয়ার পর থেকে রাস্তা খারাপের কারণে আসতে সময় লেগেছে। সে কারণে মুক্তামনিসহ সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) মুক্তামনিকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। ডাক্তাররা ওকে ছাড়পত্র দিয়েছেন। তিনটা ওষুধ আর অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। সামন্ত লাল সেন স্যার আমাকে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ করতে বলেছেন। একমাস পর আবারও চেকআপের জন্য ঢাকায় যেতে বলেছেন।
মুক্তামনির বাবা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নিয়ে আমার মেয়ের এত বড় চিকিৎসা করিয়াছে এজন্য তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রী সব সময় আমার মেয়ের খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি সহযোগিতা করেছেন বলেই আমার মেয়ের এই চিকিৎসা করানো গেছে। মুক্তামনি বলে, প্রায় ছয় মাস পরে বাড়িতে ফিরছি। আমার অনেক ভালো লাগছে। ঢাকায় থাকা অবস্থায় বাড়ির কথা আমার বারবার মনে পড়তো। আমার বড় বোন হিরামনির বার্ষিক পরীক্ষার জন্য ২২ দিন আগে সে বাড়িতে এসেছিল। ওর জন্য আমার খুব কষ্ট হতো। ও আমার যমজ বোন তো। কিছু সময় না দেখলে আমার খুব কষ্ট লাগে। অনেক দিন পর বাড়ি আসলাম সবার সাথে দেখা হবে দেখা হবে কথা হবে বন্ধুদের সাথে খেলবো। আমার খুব ভালো লাগছে।
এ বছরের ১২ জুলাই ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হয় মুক্তামনি। প্রথমে তার রোগটিকে বিরল রোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরে বায়োপসি করে জানা যায়, তার রক্তনালীতে টিউমার হয়েছে। তখন তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেন বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা। মুক্তামনির সব রিপোর্ট দেখে তারা চিকিৎসা করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে ঢামেকের চিকিৎসকরাই তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। পরে মুক্তামনির চিকিৎসার সব ধরনের খরচের দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুক্তামনির হাতে ৫ আগস্ট প্রথম অস্ত্রোপচার হয়। তার হাতের ফোলা অংশ অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেন চিকিৎসকরা। পরে দুই পায়ের চামড়া নিয়ে দুই দফায় তার হাতে লাগানো হয়। ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালামের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ একদল চিকিৎসক মুক্তামনির স্কিন গ্রাফটিং (চামড়া লাগানো) অপারেশনে অংশ নেন। পরে মুক্তামনির হাত আবার ফুলে যাওয়ায়, ফোলা কমানোর উদ্দেশ্যে হাতে প্রেসার ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হয়।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি