নিজস্ব প্রতিবেদক:
দই চিড়া জীবনে একবার হলেও মুখে তোলেননি এমন লোক কি একজনও পাওয়া যাবে এদেশে? সন্দেহ হয়। এত পরিচিত একটা খাবার নিয়ে তাই খুব বেশি হৈ চৈ করার কথা না। অবশ্য সেটা যদি মানিকের দই-চিড়া হয়, তাহলে সেটা নিয়ে আলাপ একটু হতেই পারে।
যারা চেনেন না তাদের জন্য বলা, মানিক মিয়ার দই চিড়া পুরান ঢাকার বহু মানুষের সকাল বিকালের প্রিয় নাস্তা। রায় সাহেব বাজারের জনসন রোডের মানিক সুইটমিটে জজ কোর্টের জাঁদরেল বিচারক, ঘাঘু উকিল থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার বিখ্যাত ব্যবসায়ী পর্যন্ত হাজির হয় এখানে দই-চিড়ায় প্রাণ ঠান্ডা করতে।
কিন্তু ব্যাপারটা একটু কেমন হয়ে গেলো না? এমন কি আহামরি দই-চিড়া বেচেন মানিক মিয়া যে সেটা নিয়ে এতো হুড়োহুড়ি?
আসলেই মানিকের দই-চিড়া স্বাদে আর বানানোর তরিকায় বেশ অন্যরকম। শুধু দই আর চিড়া দিয়ে মোটেই তৈরি হয় না মানিকের দই চিড়া। এতে থাকে খুব চমৎকার করে বানানো ঘন দই আর লাল লাল চিড়া। তার সাথে মেশানো হয় খাটি দুধের ঘোল, নারকেল, কলা আর রসগোল্লার সিরা। আর সব শেষে ছেড়ে দেয়া হয় গুড়ে মাখানো মুচমুচে মুড়কি। দই-চিড়া বানানোর এমন অভিনব রেসিপির জন্যই মানিকের দই-চিড়া এত বিখ্যাত।
১৯৮৪ সালে একটি টিনের চালার নিচে শুরু হয় মানিক মিয়ার দই চিড়ার দোকান। শুরুর দিকে এক সের দইয়ের দাম রাখা হত ৬০-৭০ টাকা। দইয়ের মান ভালো ছিলো শুরু থেকেই তার উপর স্বাদের দিক দিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই দারুণ পরিচিতি পেয়ে যায় মানিক মিয়ার দোকান। সকালের নাস্তায় তার বানানো দই-চিড়ার জন্য প্রতিদিন ভিড় করতে থাকেন খদ্দেররা। তাদের সামলাতে ১৯৯০ সালের দিকে মানিক মিয়া নিয়োগ দেন ৫-৬ জন কর্মচারী। ২০০৬ সালের দিকে ব্যবসার নাম পাল্টে করা হয় মানিক সুইটমিট। আর তার সাথে নিয়োগ দেয়া হয় আরো ৭ জন কর্মচারী।
আদালতের পাশেই বলে সারাদিনের আনাগোনায় দোকানের বেশির ভাগ খদ্দেরই উকিল, জর্জ, ম্যাজিট্রেট এবং পুলিশ কর্মকর্তা। তবে মাঝে মাঝেই নতুন ঢাকার খাদ্যরসিকরা দল বেধে হাজির হন মানিকের দই চিড়া খেতে।
দোকানটি খোলা হয় প্রতিদিন সকাল ছয়টায়, বন্ধ হয় রাত বারোটায় ।
দোকানের ম্যানেজার মুহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন জানান, দই-চিড়ার প্রতি বাটি ৫০ টাকা করে। দইও বিক্রি হয়, প্রতি সের ২২০ টাকা দামে।
মানিকের দই-চিড়া খেতে আসা চিফ জুডিশিয়াল কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী রাশেদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুরোনো ঢাকার খাবারগুলোর মধ্যে এটা একটা ব্যতিক্রমী খাবারের আইটেম, এটা খাওয়ার পর শরীরের ক্লান্তি থাকে না। গরমের দিনে তো বুঝতেই পারছেন, দই চিড়ার কর্যকারিতা দারুণ। আমি এই দোকানের নিয়মিত খদ্দের।’
দাম নিয়েও কোনো অভিযোগ নেই খদ্দেরদের, তাদের মতে দাম একদমই বেশি নয়, বরং সহনীয়। দোকানের লোকজনের ব্যবহারও ভালো, খদ্দেরকে অতিথি জ্ঞান করে।
দৈনিক দেশজনতা/এমএইচ /সময়: ২.১৫