নিজস্ব প্রতিবেদক:
মিয়ানমার সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি কক্সবাজারের উখিয়াবাসীর সহানুভূতি ধীরে ধীরে কমে আসছে বলে জানানো হয়েছে এক অনুষ্ঠানে। কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশেপাশের এলাকায় পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে এই পর্যবেক্ষণের কথা জানান মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ প্রতিবেদন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন তিনি।
সুলতানা কামালের নেতৃত্বে পাঁচ দিনের ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনে’ ভারতের সাংবাদিক ভারত ভূষণ, মালদ্বীপের মানবাধিকার কর্মী জিহান মাহমুদ, নেপালের মানবাধিকার কর্মী রাজেন্দ্র ঘিমিরি ও শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার কর্মী দিকশিয়া ইলাংগাসিং অংশ নিয়েছেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করে সে দেশের সেনাবাহিনী। আর প্রাণ বাঁচাতে লাখে লাখে রোহিঙ্গারা ছুটে আসে বাংলাদেশের কক্সবাজার সীমান্তে। শুরুতে বাধা দিলেও পরে রাখাইন রাজ্যের করুণ অবস্থা জেনে সীমান্ত খুলে দেয় বাংলাদেশ। আর তিন মাসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার আশ্রয় হয়েছে কক্সবাজারের উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায়। সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য খোলা হয়েছে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের স্রোত তৈরি হওয়ার পর পর সারাদেশ থেকে বিভিন্ন সংগঠন তাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে গেছেন ক্যাম্পে। সেই সঙ্গে সরকারও বাড়িয়ে দিয়েছে সহায়তার হাত। ক্যাম্পবাসীদের খাদ্য ছাড়াও চিকিৎসা, শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। সাহায্য মিলেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকেও।
তবে রোহিঙ্গাদের এই ঢল ওই এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাও তৈরি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের তুলনায় তাদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর অর্থনীতিতেও পড়েছে বড় ধরনের চাপ। সুলতানা কামাল বলেন, ‘বর্তমানে স্থানীয় জনগণ থেকে রোহিঙ্গার সংখ্যা দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে। এতে বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও শ্রমবাজারে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে স্থানীয় জনগণের মধ্যে একধরনের ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের জন্য এখনো পর্যাপ্ত খাদ্য থাকলেও প্রথম দিকের তুলনায় সরবরাহ কমে গেছে। আবার চাল ও ডাল সরবরাহ বেশি হওয়ায় এতদিন রোহিঙ্গারা সেগুলো বাজারে বিক্রি করে অন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনছে।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে হলে স্থানীয় জনগণের সুবিধা অসুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে ও তাদের জনস্বার্থ ঠিক রেখে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য নেয়া কার্যক্রমে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নারী ও শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে বলেও মানবাধিকার সংগঠনের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে ক্যাম্পগুলোতে সন্ধ্যার পর চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
এই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয়া এবং তাদের প্রশিক্ষণের সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে। বলা হয়, এর ফলে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার পাশাপাশি স্থানীয়দেরও কর্মসংস্থান হবে।
টয়লেট ও টিউবওয়েল একসঙ্গে হওয়ায় শরণার্থীদের মধ্যে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। আবার আবাসস্থল থেকে টয়লেট কিছুটা দূরে হওয়ায় নারী বিশেষ করে রাতের বেলায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে জানান সুলতানা কামাল।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ