কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল মাধ্যামিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে রশিদ না দিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্কুলটির শিক্ষার্থীরা বলছেন, যশোর শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ফির চেয়ে দ্বিগুণ ফি আদায় করা হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানে। প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এসএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, আমার কাছ থেকে ২৫০০ টাকা নিয়েছেন, আমি আমার বন্ধুদের সাথে কথা বলেছি যার কাছে যেমন পেরেছেন তার কাছ থেকে তেমন টাকা নিয়েছেন শিক্ষকরা। স্কুলে টাকা নেয়া হয়েছে রশিদ না দিয়েই বাড়তি টাকা আদায় করেছে আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আমাদের বলা হয়েছে সবাইকে ডেকে একদিন রশিদ হাতে হাতে দেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, সামনে আমাদের পরীক্ষা আমরা অভিযোগ করেছি এমন খবর শিক্ষকরা পেলেই ঝামেলায় ফেলে দিবে। তাই নাম প্রকাশ করতে চাই না। আমাদের এ বিদ্যালয়ে অনেক অনিয়মের ঘটনা ঘটে। শিক্ষকরা ঠিকসময় মত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন না। তাদের ইচ্ছেমত সময়ে স্কুলে আসেন কিছু শিক্ষক। কয়েকজন শিক্ষক ছাড়া তাদের পড়ানোর মানও খুবই নিম্নমানের। ধুবইল এলাকার আয়ূইব আলী বলেন, ধুবইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছাত্রদের পড়াশুনা করানোর জন্য এখানে আসেন না। তাদের রাজনীতি করতে আসেন স্কুলে, এ স্কুলে পড়াশুনা হতো যখন ধুবইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গার উপর ছিল তখন। শিক্ষকরা কোনো প্রকার রাজনীতি সাথে যুক্ত ছিলেন না। অভিভাবকরা খোঁজ খবর করতেন সব সময় যার ফলে পড়াশুনাও হতো।
ধুবইল মাধ্যামিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, আসলেই শিক্ষকরা সময়মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন না। তাদের ইচ্ছেমতো ছুটি কাটান। কিন্তু আমাদের বেলায় অন্যরকম ছুটি নিতে হলে ছুটির আবেদন লেখা লাগে। আবেদন গৃহীত হলে ছুটি পাওয়া যায়। আর গৃহীত না হলে ছুটি নাই। এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে রশিদ না দিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগের বিসয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনাইম বলেন, রশিদ ছাপানো না থাকায় দেয়া হয়নি। ৭৫টা রশিদ একবারে অনেকগুলা তাই দেয়া সম্ভব হয়নি। আজ সব রশিদ লেখা হয়ে গেছে ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে আসলেই রশিদ তাদের হাতে দেয়া হবে।
ধুবইল মাধ্যামিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সামসুল হক বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে নির্ধারিত ফি চার্ট দিয়েছেন ২৩৪০ টাকা নেওয়ার জন্য। আমরা তার চেয়ে ১০০ টাকা কম নিয়েছি। রশিদ না দিয়ে টাকা নেওয়ার কথার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, আজকে রশিদ লেখা সম্পন্ন হয়েছে। এখন ছাত্ররা স্কুলে আসলেই রশিদ দেয়া হবে। টাকা দেওয়ার একমাস পর রশিদ দেবেন? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের কাজের ব্যস্ততার কারণে দেরি হয়ে গেছে।
ধুবইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ধুবইল (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহাবুর রহমান মামুন বলেন, রশিদ না দিয়ে টাকা নেওয়া হয়েছে এটা আমার নলেজে ছিলো না। মাসিক মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে জবাবদিহিতা চাওয়া হবে। মিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জুলফিকার হায়দার বলেন, রশিদ বাদে টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বলা হয়েছে শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া যাবে না। আর উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে নির্ধারিত ফি চার্ট দিয়েছে ২৩৪০ টাকা নেওয়ার জন্য এটা প্রধান শিক্ষক সামসুল হক মিথ্যা বলেছেন।
কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসার জায়েদুর রহমান বলেন, রশিদ বাদে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষা বোর্ডে নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ পেলেই সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি