আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেইসঙ্গে তেলআবিবে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসও জেরুজালেমে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। আজ বুধবার ট্রাম্প এ ঘোষণা দেবেন বলে জানিয়েছেন দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। পাশাপাশি এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশসহ নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার নেতারা।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, নিজের ইচ্ছা জানাতে ট্রাম্প মঙ্গলবার ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসসহ আরব নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সবাই তাকে সতর্ক করেন যে, এর পরিণতি বিপজ্জনক হবে। এর ফলে একদিকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা হুমকির মধ্যে পড়বে। সেইসঙ্গে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার যে প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে তাও ভেঙে পড়বে।
এই মুহূর্তে জেরুজালেমে কোনো দেশের দূতাবাস নেই। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলকে জেরুজালেমের ওপর মালিকানা বা এখতিয়ারের বৈধতাও দেয়নি। ইসরাইলের দাবি, ১৯৬৭ সালে সিরিয়া, মিসর ও জর্ডানের সঙ্গে যুদ্ধে পূর্ব জেরুজালেম দখলের পর থেকে শহরটি তাদের রাজধানী। তাছাড়া তারা পূর্ব ও পশ্চিম জেরুজালেম মিলে সমন্বিত শহর করার কথা বলে আসছে।
ন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছে, তাদের ভবিষ্যত রাষ্ট্রের রাজধানী হবে জেরুজালেম। যাই হোক, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তেলআবিব থেকে দূতাবাস জেরুজালেমের সরানোর খবরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন বা সংস্থার নেতারা। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পকে বলেছেন, তার (ট্রাম্প) এ সিদ্ধান্তের পরিণতি হবে ভয়াবহ এবং এর ফলে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। সেইসঙ্গে অত্র অঞ্চল তথা বিশ্বের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হবে।
ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার পর মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাভিল আবু রুদেইনা এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। জর্ডানের বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ট্রাম্পকে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত অত্র অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ওপর বিপজ্জনক প্রভাব ফেলবে। জর্ডানের রাজপ্রাসাদ থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে এ কথা জানানো হয়েছে।
মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসিও এ ব্যাপারে ট্রাম্পকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া উপেক্ষিত হবে। মিসর সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার সকালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ট্রাম্প যদি দূতাবাস সরানোর উদ্যোগ নেন তাহলে তার দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে।
অন্যদিকে, সৌদি বাদশা সালমানের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় সৌদি বাদশা বলেছেন, স্থায়ী কোনো সমাধানে আসার আগে আমেরিকার যেকোনো ধরনের ঘোষণা শান্তি আলোচনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে দেবে। সৌদি সরকারি গণমাধ্যম এসপিএ বাদশার বরাত দিয়ে বলেছে, ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের ঐতিহাসিক অধিকারকে সমর্থন করে সৌদি আরব। সেইসঙ্গে জোর দিয়ে বলা হয়, এই ধরনের বিপজ্জনক উদ্যোগে জেরুজালেম ও আল-আকসা মসজিদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে, যা বিশ্ব মুসলিমকে উত্তেজিত করবে।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাবরিয়েল সতর্ক করে বলেছেন, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা সংক্রান্ত মার্কিন ঘোষণা্ চলমান দ্বন্দ্বকে প্রশমিত করবে না, বরং আগুনে আরো ঘি ঢেলে দেবে। তাই এ ধরনের উদ্যোগ হবে বিপজ্জনক। ব্রাসেলসে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সেটা সবার চাওয়া হওয়া উচিত।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ কূটনীতিক ফেড্রিকা মোঘেরিন বলেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন যেকোনো পদক্ষেপ থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিয়ো গুতেরেস বার বার সতর্ক করে বলেছেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যে দ্বিজাতি রাষ্ট্রের যে সমাধানের চেষ্টা চলছে, একক কোনো সিদ্ধান্ত সে প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজাররিক নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন।
গাজার নিয়ন্ত্রণকারী হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে মানুষকে ফুঁসিয়ে তুলবে এবং জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সর্বোচ্চ সীমানা লঙ্ঘন করবে। আরব লীগের প্রধান আহমেদ আবুল ঘেইত সতর্ক করে বলেছেন, জেরুজালেমের বর্তমান বৈধ ও রাজনৈতিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে এমন কোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র নিতে পারে না।
জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করবেন ট্রাম্প এমন খবরের প্রেক্ষিতে মিসরের রাজধানী কায়রোয় মঙ্গলবার সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় বসেন ঘেইত। সেখানেই এ কথা বলেন তিনি। আরব লীগ প্রধান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত গোটা মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থাকে অস্থিতিশীল করবে। তিনি বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে মার্কিন প্রশাসনের প্রতি আহ্বানও জানান।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ