নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যাকাণ্ডের আজ তিন বছর। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের পৌনে দু’বছর পর বিচারকাজ শুরু হলেও নানা সমস্যায় ধীরগতিতে চলছে সাক্ষ্য গ্রহণ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধান বিচারপ্রতির নেতৃত্বে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ছয় মাসের সময় বেঁধে দেয়।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার হয়নি চার্জশীটভূক্ত পলাতক ১২ আসামি, উদ্ধার হয়নি হত্যায় ব্যবহৃত সকল আগ্নেয়াস্ত্র। মামলার সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে নিহতের পরিবার।
২০১৪ সালের ২০ মে প্রকাশ্য দিবালোকে ফেনী শহরের একাডেমিতে একরামকে গুলি করে, কুপিয়ে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে নৃংশসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যাকারীরা গ্রেফতার হওয়ার পর জানা যায় সরকার দলীয় অন্তর্কোন্দলের কারণে হত্যা করা হয় একরামকে। হত্যার সাথে রাঘব-বোয়ালদের নাম বেরিয়ে এলে গা ঢাকা দিয়ে আত্মগোপনে যায় মূল চক্রান্তকারীরা। হত্যার পর ফুঁসে ওঠে এলাকাবাসী, হরতাল-অবরোধ-বিক্ষোভসহ মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে তারা।
একরাম হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই রেজাউল হক জসিম বাদি হয়ে বিএনপি নেতা মাহাতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনারর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে মামলা করে। হত্যার ১০০ দিন পর ২০১৪ সালের ২৮ আগষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ৫৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ পত্র (চার্জশীট) দাখিল করে। আদালত আড়াই মাস পর ওই বছরের ১২ নভেম্বর আলোচিত এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে। চলতি বছরের ১৬ মে ছিল সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ। এদিন আদালতে সাক্ষীরা অনুপস্থিত থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। তবে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নিলুফা সুলতানার আদালতে গ্রেফতারকৃত সকল আসামিরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। আদালত আগামী ১২ জুন পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারণ করেছে।
মামলার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হাফেজ আহম্মদ জানান, এ পর্যন্ত আদালত মামলার বাদি একরামের বড় ভাই রেজাউল হক জসিম, ছোট ভাই এহসানুল হক, নিহতের স্ত্রী তাসমিন আক্তার, গাড়ি চালক আবদল্লাহ আল মামুনসহ ৪৭ জন সাক্ষীর স্বাক্ষ্যগ্রহণ করেছে। মামলার অভিযোগ পত্রে পুলিশ ৫৯ জনকে সাক্ষী করেছিলো। এদের মধ্যে সাধারণ সাক্ষী রয়েছে ২৮ জন। এই মামলায় গ্রেফতারকৃত ৪৪ আসামির মধ্যে কারাগারে বন্দি আছেন ২৪ জন আসামি। জামিনে আছেন ২০ আসামি। এ মামলায় এখনও পলাতক রয়েছে ১২ জন আসামি। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১৬ জন আসামি হত্যার দ্বায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
একরামের বড় ভাই মোজাম্মেল হক জানান, সব হত্যার বিচার হাশরের ময়দানে হবে। হত্যাকারীদের জবানবন্দীতেই ফুটে উঠেছে কারা হত্যা করেছে, কেন হত্যা করেছে। বিভিন্ন টিভিতে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ ও পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কারা কিলিং মিশনে জড়িত আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আদালতে ভিডিও ফুটেজ ও পত্রিকা কাটিংগুলো জমা হয় নাই। প্রকৃত হত্যাকারীদের শাস্তি চাই। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে স্বাক্ষীরা রাজনৈতিক চাপের কারণে স্বাক্ষী দিতে আসে না। একরাম হত্যাও এর ব্যতিক্রম নয়। এ বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
নিহত একরামের নিষ্পাপ তিন শিশু সহসাই তাদের বাবার হত্যার বিচার দেখবে এমনটাই আশা করছে একরামের পরিবার।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ