২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:০৮

সাভারে আলাদিনের চেরাগে এসব কী!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সাভারের বংশী নদীর কূল ঘেষে ধামরাইয়ে কুল্লা ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে একটি বিনোদন কেন্দ্র। অভিযোগ রয়েছে, এই বিনোদন কেন্দ্রের ভেতরে চলছে মাদক ব্যবসা ও অসামাজিক কার্যকলাপ। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে। তবে ওই বিনোদন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বাড়তি মুনাফা আয়ের জন্য অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের সীতিপাল্লি গ্রামের আলাদিন’স পার্কে গেলে এসব অভিযোগ পাওয়া যায়। আলাদিন’স পার্কে ঢোকার পর দেখা গেছে, বিভিন্ন রাইডস থাকলেও সেগুলো অকেজো। ফলে বিনোদনের নামে প্রকাশ্যে চলছে অশ্লীলতা। বিনোদনের জন্য তৈরি হলেও এখানে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ।

প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই পার্কটিতে থাকে অসংখ্য প্রেমিক যুগলের ভিড়। ২০০ টাকার টিকিটে দর্শনার্থীরা ঢুকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যে কর্মকাণ্ড করে সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এদের মধ্যে অধিকাংশই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিশোর-কিশোরী বা তরুণ-তরুণী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, পার্কের ভেতরে বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য রাইড থাকলেও সেগুলো সচল নেই। ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়ে ঝোঁপঝাড়ের ভেতরে তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের আপত্তিকর অবস্থা। এ ছাড়া কটেজ ভাড়া নিয়েও চলছে দেহ ব্যবসাসহ মাদক ব্যবসা। এসবের বিষয়ে প্রতিবাদ করলে পার্ক কর্তৃপক্ষের ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হুমকি দেয়া হয়। তাই পরিবারের কথা চিন্তা করে কাউকে কিছু বলেন না তারা।

আলাদিন’স পার্কের ব্যবস্থাপক (রিসোর্ট) কামরুল ইসলাম নেওয়াজ জানান, তাদের তৃতীয় তলার রিসোর্টে ৪৪টা রুম রয়েছে। ২৪ ঘণ্টার জন্য ৩ হাজার ও ৪ হাজার টাকার প্যাকেজ রয়েছে। ৩ হাজার টাকার প্যাকেজের রুমে মেয়েদের বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হয়। আর ৪ হাজার টাকার প্যাকেজে ভেতরেই ব্যবস্থা আছে। আপনি ছবি দেখে পছন্দ করলেই রুমে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এ ছাড়া আনন্দ-ফূর্তির (মদ, বিয়ারের) ব্যবস্থাও রয়েছে।

রিসোর্টের কর্মচারী মো. সোহেল বলেন, আমি এক বছর ধরে এখানে কাজ করছি। পার্কে যে দর্শনার্থী একবার আসে সে আর দ্বিতীয়বার আসতে চায় না। কারণ হিসেবে বলেন, কোনো রাইড সচল নাই। এখানে ছেলেরা মেয়েদের নিয়ে ফূর্তি করতে আসে। তবে স্থানীয় কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কালিপদ সরকার বলেন, পার্কের ভেতরে মাদক ব্যবসা ও নারী দিয়ে ব্যবসা করার বিষয়টি এখনও আমার নলেজে আসেনি। যেহেতু আমি বিষয়টি জানলাম, অবশ্যই এর ব্যবস্থা নিব।

তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে আলাদিন’স পার্কের ব্যবস্থাপক কোরবান আলী বলেন, আমাদের এখানে কোনো মাদকের ব্যবসা হয় না। এটা পার্ক, বিনোদনের জন্য লোকজন আসে। তবে পার্কের একটি রাইডও চালু করে দেখাতে পারেননি তিনি। কর্মচারী ও এক কর্মকর্তার দেয়া বক্তব্যের বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি পরে সব স্বীকার করে বলেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে পার্ক করা হয়েছে। ওইসব না চললে চালান উঠবে কিভাবে? পরে সাংবাদিক পরিচয় নিশ্চিত হয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে এ প্রতিবেদককে বিভিন্ন লোক দিয়ে তদবির করেন তিনি।

ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রিজাউল হক বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স। তবে আমি জানি, ওই পার্ক এখনও চালুই হয়নি। যেহেতু আপনি আরো অ্যাডভান্স তথ্য দিলেন এবং কটেজে অসামাজিক কার্যকলাপ হয় সেহেতু বিষয়টি আমি দেখছি।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :ডিসেম্বর ৪, ২০১৭ ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ