চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম মহানগরে হঠাৎ অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেছে যানবাহন মালিকদের একাংশ। আজ রবিবার ভোর থেকে এই পরিবহণ ধর্মঘট শুরু করেন তারা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নগরীর চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ পেশাজীবী শ্রেণির মানুষ। পুলিশি হয়রানি বন্ধ, অনুমোদন ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধসহ ১১ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের এই পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেছে বলে জানিযেছেন পরিবহণ মালিক সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। আর এতে সড়কে এসে নাকাল হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
প্রতিদিনের মতো আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৮ টায় চট্টগ্রাম ইপিজেডের ইয়ংওয়ান কারখানার সুপারভাইজার জসিম উদ্দিন নগরীর বহদ্দারহাটের নিজ বাসা থেকে বেরিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু সড়কে যানবাহন না থাকায় সকাল ১১ টা পর্যন্ত তার অপেক্ষার পালা শেষ হয়নি। হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটে দুর্ভোগের কথা জানিয়ে জসিম উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সাথে বহদ্দারহাট মোড়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বেসরকারি কারখানা ও সরকারি অফিসে ছুটে চলা শতাধিক মানুষ ধর্মঘটে বিস্ময় প্রকাশ করেন। আর এ সুযোগে প্যাডেলচালিত রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা চালকরা তিগুন-চারগুন ভাড়া হাঁকাচ্ছেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
পরিবহণ মালিক সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, পুলিশি হয়রানি বন্ধ, অনুমোদন ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধসহ ১১ দফা দাবিতে তারা অনির্দিষ্টকালের গণপরিবহন ধর্মঘটে নামতে বাধ্য হয়েছেন। তবে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পরিবহণ ধর্মঘট শুরুর কারণ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রো গণপরিবহন মালিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন বলেন, সংগঠনের সিদ্ধান্তে হঠাৎপরিবহণ ধর্মঘট শুরু করা হয়েছে। এতে যাত্রী সাধারণকে কষ্ট দেয়ার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
তাছাড়া আমরা মনে করেছি, নগরীতে অনুমোদনহীন ও ফিটনেসবিহীন অবৈধ যানবাহনগুলো তো চলবে। তাতে যাত্রী সাধারণ মোটামুটি যাতায়াত করতে পারবে। তাই হঠাৎ হলেও ধর্মঘট শুরু করা নিয়ে আমাদের কোনো টেনশন ছিল না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের পরিষদের অধীনে দেড় হাজারের বেশি গাড়ি রয়েছে। বৈধ বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার, টেম্পুসহ সব ধরনের গণপরিবহন আমাদের পরিষদের আওতায়। ফলে বৈধ কোনো যানবাহন সড়কে নামেনি। ধরার পড়ার ভয়ে অবৈধ যানহানগুলোও চলাচল করছে না। তবে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তাদের কোনো গাড়ি চলবে না বলে জানান তিনি।
ধর্মঘট সম্পর্কে তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট চলবে। দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। ১১ দফা দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু দাবি আদায় হয়নি। কেউ আমাদের কথা শুনেনি। এদিকে ধর্মঘটের কারণে নগরীর সবকটি সড়কের মোড়ে মোড়ে যাত্রী সাধারণের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে নগরীর চকবাজার সড়কের বাদুরতল, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, কাজির দেউড়ি, লালখানবাজার, টাইগারপাস, বহদ্দারহাট, কালুরঘাট বিমানবন্দর সড়কের মুরাদপুর, ষোলশহর, জিইসির মোড়, আগ্রাবাদসহ পুরো নগরীতেই গাড়ির জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা কতে দেখা গেছে।
নগরীর সড়কগুলোর চিত্র প্রায় যানবাহনশুন্য। তবে প্যাডেল চালিত রিকশাগুলো চলছে। আর রিকশা চালকরা সুযোগ পেয়ে ২০ টাকার ভাড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকা দাবি করছে। কিছু কিছু সিএনজি অটেরিকশা চলাচল করলেও ৬০ টাকার ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করছে। এ নিয়ে যাত্রী সাধারণের সাথে বাকবিতণ্ডা হতেও দেখা গেছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি