আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কথা বলতে পারেন না৷ কানেও শোনেন না৷ তাতে কী? কথা বলিয়ে দিল ফেসবুক৷ চার হাত এক করল সোশ্যাল মিডিয়াই৷ মন্ত্র উচ্চারণ না-ই হোক, সাতপাক ঘোরা, সিঁদুরদান, কিছুই বাদ গেল না৷
পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে তুলসী শর্মার হাত ধরে ছত্রিশগড়ের বিলাসপুরের বাড়িতে ফিরল শুভেন্দু সাহা৷ মঙ্গলবার রাতে বিশুদ্ধ ‘ফেসবুক-বিয়ের’ সাক্ষী রইল কলকাতা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূর বীরভূম জেলার ঈশ্বরপুর গ্রাম৷ মূক ও বধির হলেও দুজনে লেখাপড়া শিখেছেন৷ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ তুলসীকে নিয়ে কত চিন্তাই না ছিল৷ বোবা-কালা মেয়ের বিয়ে হবে কেমন করে? মেয়ে নিজেই পাত্র জুটিয়ে নিলেন৷ শ্বশুরবাড়ি রওনা হওয়ার আগে সলজ্জ হাসিতে তুলসী ইশারায় জানালেন ফেসবুকে শুভেন্দুই প্রথম ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলেন৷ আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতো মূক ও বধিররাও যে ইন্টারনেটের সৌজন্যে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে নিতে পারেন, প্রমাণ করলেন শুভেন্দু-তুলসী৷
হাসি গোপন করতে পারছিলেন না সুদর্শন শুভেন্দু৷ ইশারায় বোঝালেন তাদের প্রেমের ইতিবৃত্ত৷ ফেসবুকে আলাপের কিছুদিন পর মোবাইল নম্বরের আদানপ্রদান হয়৷ তারপর মেসেঞ্জার চ্যাট৷ ভিডিও কলে দেখাও হয়েছে কয়েক বার৷ সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি শুভেন্দু৷ নিজের প্রেমের খবর জানান বাড়িতে৷ বিলম্ব করেননি শুভেন্দুর বাবা সুভাষচন্দ্র সাহাও৷ আদতে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের বাসিন্দা কর্মসূত্রে বিলাসপুরে থাকেন৷
সুভাষ বলেন, ‘ভাবতাম, ব্যবসা করে বটে, কিন্তু মূক ও বধির ছেলেটাকে বিয়ে দেব কী করে? ও যখন তুলসীর সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানান, সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করি আহমেদপুরের শর্মা বাড়ির সঙ্গে৷ পরে এখানে এসে মেয়েকে দেখে ওর পরিবারকে আমাদের বাড়ি যেতে আমন্ত্রণ জানাই৷’ তুলসীর বাবা-মাও ছুটে যান বিলাসপুরে৷ বিয়ে পাকা হয়৷ সেটাই পরিণতি পেল মঙ্গলবার৷ আজকাল প্রায়ই ফেসবুকে আলাপের সূত্রে প্রেমে প্রতারণা, নানা দুষ্কর্মের অভিযোগও ওঠে৷ কিন্তু ফেসবুক যে ভালো পরিণতিও এনে দেয়, শুভেন্দু-তুলসী তার প্রমাণ৷
তুলসীর দুলাভাই প্রশান্ত শীল বলেন, ‘ফেসবুক যে কত ভালো কাজে লাগে, তা বুঝলাম৷ আমরা তো মেয়ের বিয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম৷’ বিয়ে হবে না ভেবে বাড়িতেই ছোট ওয়েল্ডিং মেশিন বসিয়ে তুলসীকে ব্যবসায় নামিয়েছিল তার পরিবার৷ এলাকায় মূক ও বধির স্কুল নেই বলে কলকাতায় পড়ে মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি৷ ভর্তি হন আহমেদপুর দুর্গা বালিকা বিদ্যালয়ে৷ শিক্ষিকারাও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ছবি এঁকে পড়াতে শুরু করেন তাকে৷
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা চন্দনা সাহা সর্দার চৌধুরী বলেন , ‘তুলসী আমাদের কাছে প্রেরণা৷ পড়াশোনার জন্য ও এবং ওর মায়ের চেষ্টা দেখে আমরা মুগ্ধ৷ আজ ও সুপাত্রের হাতে পড়ল৷ আমাদেরও মনটা ভরে গিয়েছে৷’
সূত্র: এই সময়
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ