২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:৫৫

রোহিঙ্গা ‘থাবায়’ অস্তিত্ব সংকটে সামাজিক বনায়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

খাদ্যসহ অন্যান্য ত্রাণ পেলেও রান্নাবান্নার কোনো জ্বালানি না পাওয়ায় সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে চাহিদা মেটাচ্ছে রোহিঙ্গারা। ফলে উজাড় হচ্ছে শত শত একর বনভ’মির গাছগাছালি। মিয়ানমার সেনাদের দমন-নিপীড়নের শিকার হয়ে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। ৫ হাজার একর বনভূমি দখল করে বস্তি গড়ে তুলেছে তারা।

সর্বস্ব হারানো এসব রোহিঙ্গার জীবনধারণের জন্য বিভিন্ন সরকার-বেসরকারি সংস্থা ও দাতাগোষ্ঠী খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধসহ অন্যান্য সেবা সরবরাহ করছে। কিন্তু রান্নার জন্য জ্বালানির ব্যবস্থা করেনি কেউ। রোহিঙ্গারা বনের গাছ কেটে সংগ্রহ করছে জ্বালানি।

প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা শত শত রোহিঙ্গা কাছের বনসম্পদ ও অংশীদারির ভিত্তিতে গড়ে তোলা সামাজিক বনায়নের মূল্যবান গাছগাছালি নির্বিচারে কেটে নিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। বুধবার থাইংখালী ঘোনারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সর্বশেষ সীমান্তে গিয়ে দেখা যায়, একদল রোহিঙ্গা শিশু লাকড়ি সংগ্রহ করে নিয়ে আসছে। এসব লাকড়ি সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে বানানো।

রোহিঙ্গা শিশু হাকিমুল্লাহ ও মনিরা বেগম জানায়, লাকড়ি না আনলে তারা খাওয়া-দাওয়া করতে পারবে না। তাই বন থেকে গাছ কেটে লাকড়ি সংগ্রহ করেছে। তারা আরো জানায়, তাদের মতো প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের কোনো কোনো সদস্য বন থেকে প্রতিদিন লাকড়ি সংগ্রহ করে। উখিয়া সদর ও ইনানী রেঞ্জের আওতাধীন ১৪টি বনবিটের শতাধিক বনকর্মী বনসম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত থাকলেও তারা এ ব্যাপারে নির্বিকার বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রোহিঙ্গাদের গাছ কাটার সত্যতা নিশ্চিত করে ইনানী বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ইব্রাহিম হোসেন তাদের লোকবলস্বল্পতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অল্প লোকবল নিয়ে শত শত রোহিঙ্গার গাছ কর্তনে বাধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ বাধা দিতে গিয়ে বনকর্মীদের নিরাপত্তার সংকটের কথাও জানান তিনি।

বন রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, ইনানী বনসম্পদ ও সামাজিক বনায়নের গাছ-গাছালি রক্ষার্থে বন রক্ষা সহায়ক কমিটির পাহারাদার সদস্যরা রোহিঙ্গাদের বেশ কয়েকবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এ সময় রোহিঙ্গারা ক্ষেপে গিয়ে তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার্থে পাহারা দলের সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে চলে আসেন।

রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সহায়তার সঙ্গে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি লাকড়ি সরবরাহ করলে সামাজিক বনায়ন ও বনসম্পদ রেহাই পেতে পারে বলে জানান বন রেঞ্জ কর্মকর্তা। তা না হলে এখানে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থানে বনসম্পদ ও সামাজিক বনায়ন উজাড় হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :নভেম্বর ৩০, ২০১৭ ১২:২৪ অপরাহ্ণ