২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:৫৫

অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন বেগম মুশতারী শফী

শিল্পসাহিত্য ডেস্ক:

অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪১৪’ পেলেন লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা বেগম মুশতারী শফী। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, সৃজনশীল সাহিত্য ও সাহিত্যসংগঠক হিসেবে বাংলা সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের টিআইসি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। এই প্রথম অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান রাজধানীর বাইরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের সভাপতিত্বে এদিন উপস্থিত থাকবেন লেখক-সাংবাদিক আবুল মোমেন, নারীনেত্রী লেখক অধ্যাপক মালেকা বেগম এবং লেখক অধ্যাপক ফেরদৌস আরা আলীম।

শহীদজায়া ও শহীদভগ্নি বেগম মুশতারী শফী বর্তমানে চট্টগ্রাম উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, সম্পাদক, বেতার ব্যক্তিত্ব, উদ্যোক্তা, নারীনেত্রী, সমাজসংগঠক এবং সর্বোপরি সাহসী মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি একাধারে উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি, কিশোর গল্পগ্রন্থ, স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ও মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক বই লিখেছেন। সব মিলিয়ে তার বইয়ের সংখ্যা গোটা বিশেক। এর বাইরেও তার বেশ কিছু লেখা এখনও গ্রন্থাকারে প্রকাশ পায়নি।

মুশতারী শফীর জন্ম ১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার স্বামী ডা. মোহাম্মদ শফি ও তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছোটভাই এহসান শহীদ হন।

পরিবারটি সবসময়ই চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও পরিবারটির একটি ভূমিকা ছিল।

মুশতারী শফী ষাট দশকের শুরুতেই মফস্বল চট্টগ্রামে নারীদের সংগঠন ‘বান্ধবী সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেন। সেখান থেকে প্রকাশ করেন নারীদের নিয়মিত পত্রিকা ‘বান্ধবী’, এমনকি চালু করেন নারী পরিচালিত ছাপাখানা, ‘মেয়েদের প্রেস’। কম্পোজ করা থেকে শুরু করে, মেশিন চালানো, বাঁধাই সব কাজই একসময় ‘বান্ধবী’রাই করতে লাগল।

মুশতারী শফীর বাড়ির নিচের গ্যারেজের জায়গাতে ছাপাখানা বসানো হলো। ৬৮, ৬৯-এ রাজনৈতিক পোস্টার, লিফলেট এসব ছাপানোর কাজ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’র সূত্রপাত হয়েছিল তার ঐতিহাসিক বাড়ি ‘মুশতারী লজ’ থেকেই। মেয়েদেরকে গান, গিটার, তবলা, সেলাই, এমনকি চামড়া কেটে ডাইস করে ব্যাগ তৈরি করাসহ নানারকমের কুটিরশিল্পের কাজ শেখানো হতো বান্ধবী সংগঠন থেকে। ‘বান্ধবী পুরস্কারও’ প্রবর্তন করা হয়েছিল।

একাত্তরে বান্ধবী সংঘের পক্ষ থেকে বড় বড় তিনটা নারী সম্মেলন হয়। জীবিকাসূত্রে বেতার কথিকা, নিবন্ধ ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত কলামধর্মী লেখা লিখতেন মুশতারী শফী। গল্প, উপন্যাস ও ছোটদের জন্যও লিখেছেন। তবে তার লেখালেখির প্রিয় বিষয় মুক্তিযুদ্ধ। তিনি তার মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ : ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’ বইটির অনেকগুলো সংস্করণ বের হয়েছে। পরে এর ইংরেজি অনুবাদও প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরেকটি গবেষণাধর্মী বই: ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী’।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়টায় তিনি কিছু ছোটগল্প লিখেছিলেন আকাশবাণী বেতারকেন্দ্রের জন্য। সেগুলোও একপর্যায়ে ‘দুটি নারী ও একটি মুক্তিযুদ্ধ’ নামে বই-আকারে বেরোয়। এছাড়া ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’ ও ‘একুশের গল্প’ নামে তাঁর আরো দুটো ছোটগল্পের সংকলন রয়েছে। ‘ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে একসময় ‘চিঠি, জাহানারা ইমামকে’ নামে দীর্ঘ একটি গ্রন্থও রচনা করেন। এছাড়া বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ওপর লিখেছিলেন ‘আমি সুদূরের পিয়াসী’ আর বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে স্মৃতি নিয়ে লিখেছেন ‘স্মৃতিতে অমলিন যারা’ গ্রন্থটি।

উল্লেখ্য, বাংলা ১৪০১ সন (১৯৯৩ সাল) থেকে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। প্রতিবছর একজন নারী-সাহিত্যিককে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :নভেম্বর ২৬, ২০১৭ ৮:০৮ অপরাহ্ণ