২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:৪৫

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ৩ পথ বাতলে দিল চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বেশ পরে হলেও মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এগিয়ে এসেছে চীন। বরাবরই নিপীড়ক মিয়ানমারের পক্ষ নেওয়া দেশটি এই সংকট সমাধানে তিনটি পথ বাতলে দিয়েছে। সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন তিন পরিকল্পনা প্রস্তাব দিয়েছে। এর শুরুই হবে রাখাইনে অস্ত্রবিরিত দিয়ে। আর এতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সমর্থন থাকতে হবে। গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। নিজ ভূমি থেকে বিতাড়ন ও শরণার্থী হিসেবে তাদের মানবেতর জীবন বিশ্বে সমালোচনার ঝড় তোলে।

জাতিসংঘসহ সব ফোরামে চীন এবং রাশিয়া বরাবর মিয়ানমারের অভিযানের পক্ষে নিজেদের অবস্থান ঘোষণা করে। কিন্তু, চীনের পররাষ্ট্র ওয়াং ই মিয়ানমারের রাজধানী নাইপেদো সফরে গিয়ে এই তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। সোমবার নাইপেদোতে এশিয়া ও ইউরোপের ৫১টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে আসেম সম্মেলন উদ্বোধন করেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। ঠিক এই সম্মেলন শুরুর আগে চীনের পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাবনা দেওয়া হলো।

ঢাকা থেকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাইপেদোতে পৌঁছে রোববার বলেন, ‘দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও মিয়ানমার নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করবে বলে চীন বিশ্বাস করে।’ এরপরই তিনি তিনটি পরিকল্পনা প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর প্রথমটি হলো, রাখাইনে অস্ত্রবিরতি কার্যকর করা। স্থিতিশীলতা আনা, যাতে বিতাড়িতরা ফিরে আসতে পারেন এবং ফের পালানোর পরিবর্তে শান্তিতে বসবাস করতে পারেন।

গত ১৯ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও এসব প্রস্তাবনা প্রকাশ করা হয়। এতে দ্বিতীয় প্রস্তাবনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, দ্বিপাক্ষিক সংলাপের পরই অস্ত্রবিরতি একটি সমাধানযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছাবে। এজন্য দু’দেশকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। ফের বাড়িঘরে আগুন এবং যুদ্ধ হবে না এমন স্বস্তি মানুষের মনে আনতে হবে।

আর তৃতীয় ও শেষ ধাপ বিষয়ে দারিদ্র দূরীকরণসহ দীর্ঘ মেয়াদী সমাধানের পথে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। যদিও গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মিয়ানমার সফরে গিয়ে এসব প্রস্তাবনার কথায় বলেছেন। সঙ্গে তিনি ঘটনার গ্রহণযোগ্য তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে রাখাইনে অস্ত্রবিরতি চলছে। এটি যাতে ফের ভঙ্গ না হয়, সেজন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানো এবং দু’পক্ষ আলোচনা করে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা।’

সফরে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচিত দু’দেশকেই (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) সাহস এবং সহায়তা করা। সেখানে প্রয়োজনী সহায়তা এবং ভালো পরিবেশ তৈরিতেও এগিয়ে আসা উচিত।

মিয়ানমার চীনের এই প্রস্তাব সমর্থন করেছে। তবে বাংলাদেশের কোনো বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি। অবশ্য চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার সফরের আসে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করেন। ঢাকা ছাড়ার আগে ওয়াং ই সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি জটিল করা ঠিক হবে না।’

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :নভেম্বর ২০, ২০১৭ ৪:১৪ অপরাহ্ণ